ঠাকুরগাঁওয়ে আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসা থেকে নিখোঁজ তিন মাদরাসার ছাত্রীর সন্ধান মিলেনি। নিখোঁজের পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সদর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেছে নিখোঁজের পরিবার।
মাদরাসা পরিচালক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় সর্বশেষ মাদরাসায় দেখা যায় নিখোঁজ তিন ছাত্রীকে। ভোর ৫টার সময় তাদের ডাকতে তাদের রুমে গেলে তাদের আর পাওয়া যায়নি। পরে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার বারান্দায় মশারী ঝুলন্ত অবস্থায় বাধা দেখতে পেয়ে মাদ্রাসা কতৃপক্ষ ধারণা করেছে তিনজনই পালিয়ে গেছে।
শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সূত্রে জানা গেছে, নিখোঁজ তিন ছাত্রী রাত ১টার সময় প্রথমে একটি রিকশা করে প্রথমে ঠাকুরগাঁও বাস স্ট্যান্ডে আসে। তারপর রিকশা বদল করে তারা ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনে উপস্থিত হয় ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে, তবে রাতে কোনো ট্রেন না পেয়ে রোড আবাসিক হোটেলে ভোর ৪টা পর্যন্ত অবস্থান করে। পরে আবাসিক হোটেলের ম্যানেজারের সহায়তায় আবার তারা স্টেশনে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে রোড অটোস্টান্ডে ফিরে আসে এবং ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে একটি অটো নিয়ে রওনা হয়।
এদিকে তিন কিশোরী নিখোঁজের পর তাদের পরিবার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করেছে।
নিখোঁজ তামান্নার মা আখলিমা বেগম বলেন, মাদ্রাসায় অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। তবুও কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা ভবনে কোনো প্রকার নিরাপত্তা প্রহরী রাখেনি। যাতে ভবনের বারান্দায় কোনো প্রকার গ্রীল নেই, ফলে সহজেই কেউ চাইলে ভবনের ভিতরে বা ভবন থেকে বাইরে যেতে পারছে। মধ্যরাতে প্রায় রাত ১২টার পরে মাদরাসার ভবন থেকে নাবালিক মেয়েরা সবার অগোচরে কীভাবে বের হয়ে যায়। আমরাতো মেয়েদেরকে তাদের ভরসায় সেখানে রেখেছিলাম।
নিখোঁজ কিশোরী এক জানান, আমরা জানতে পেরেছি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মারধর করে নির্যাতন করতো। আমার বোন নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন আগে নির্যাতনের কথা জানিয়েছিলো। দ্রুতই সেখান থেকে নিয়ে আসতে বলেছিলো। আমরা নিয়ে আসিনি, যার ফলে আজ আমার বোনকে হারাতে হলো। আমি নিশ্চিত মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে হয়তো তিন মেয়ে মাদরাসা থেকে চলে গেছেন।
যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার দায় স্বীকার করে আয়শা সিদ্দিকা মাদ্রাসার পরিচালক মুসফিক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি এত তাড়াতাড়ি এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে। মাদ্রাসার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছিলাম। আমার বিরুদ্ধে যে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে; সেটা ভিত্তিহীন। ওর হয়তো কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে।
ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়েগুলোর কাছে মোবাইল না থাকায় তাদের অবস্থান নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শীঘ্রই অগ্রগতির দিকে পৌঁছাবে পুলিশ।
মঈনুদ্দীন তালুকদার/এজে/ঠাকুরগাঁও