দালাল ছাড়া কাজ হয় না নওগাঁর মান্দা উপজেলায় রাণীনগর ভূমি অফিসে- এমন অভিযোগ অনেকের। মান্দা উপজেলার মিরপুর গ্রামের আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি রাণীনগর ভূমি অফিসে জমি সংক্রান্ত কাজে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
আবুল হোসেন তার স্ত্রীর ভাগের প্রায় ৫ শতাংশ জমি পাবেন শ্বশুড়বাড়ি থেকে। সেই জমি বছরের পর বছর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন অবৈধ ভাবে ভোগদখল করে আসছে। তার প্রাপ্য সম্পদ ফিরে পেতে আবুল হোসেন প্রায় দশমাস আগে ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল প্রক্রিয়া শেষে ভূমি অফিসে এসে একটি মিস কেস করেন। দিনের পর দিন পায়ের জুতা ক্ষয় করে আবুল হোসেন ভূমি অফিসে যাওয়ার প্রায় দশমাস পরে এসে দেখেন তার মিস কেস আবেদনের উপর স্মারক নম্বরটিও পরেনি।
এরপর আবুল হোসেন এক মাধ্যমে ভূমি অফিসের কর্তাপ্রধান ব্যক্তির কাছে গেলে ফাইলটি খুজে বের করে নম্বর বসানোর নির্দেশ দেন তিনি। আবুলের মতো এই রকম শত শত ভুক্তভোগী আছেন যারা ভূমি সংক্রান্ত সেবা নিতে এসে দিনের পর দিন মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর গিয়েও নিয়মমাফিক সেবা পাচ্ছেন না। ভূমি অফিসের চিহ্নিত দালালদের ছাড়াও অফিসের লোকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ না হয়ে সেবা নিতে গিলেই এমন দুর্বিসহ দুর্ভোগে পড়তে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী আবুল হোসেন বলেন, শক্তিশালী মাধ্যম ছাড়া কখনো জমি সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়ে ভূমি অফিস নামক দালালদের আখড়ায় কাউকে আসতে না হয় এমনই দোয়া করবো। আমি গরীব মানুষ। সামান্য এই কাজটি করতে অফিসে এলেই অফিসের লোকজনেরা বলেন আজকে স্যার নেই পরে আসেন। আবার একদিন আসলে সেদিন বলেন বাদীপক্ষের নাম ঠিকানা দিয়ে যান ফাইল খুঁজে বের করে রাখবো আপনি ওমুক দিন আসেন। এভাবে আজ প্রায় দশমাস যাবত প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে আসছি আর হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। অবশেষে কর্তাব্যক্তির হুকুমে ফাইল একটু করে নড়তে শুরু করেছে জানি না আমার এই সমস্যা সমাধান হতে আরো কতদিন লাগবে।
অফিস প্রাঙ্গনে সরেজমিনে গিয়ে একাধিক সেবা গ্রহিতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির খাজনা, খারিজ, নামজারী, মিস কেসসহ যাবতীয় জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি অফিসে এলে অফিসের ভিতরের ও বাহিরের দালাল ছাড়া সেই সব সমস্যার আবেদনপত্র জমা দিলে তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ দালালদের চাহিদা মতো অতিরিক্ত অর্থ দিলেই চোখের নিমিষেই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে ভূমি অফিসে কোনো দালাল নেই। এ ছাড়া স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মিস কেসগুলো সমাধান হতে একটু সময় লাগে। এছাড়া অফিসে জনবল অনেক কম হওয়ার কারণেও অনেক সময় সমস্যা সমাধানে দেরি হয়ে যাায়। তবুও আমরা কম সময়ের মধ্য হয়রানি ছাড়াই উন্নতমানের সেবা দেবার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘যারা দালাল ও অফিসের লোকদের মাধ্যমে হয়রানি হচ্ছেন, নির্দিষ্টভাবে আমাকে জানালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’
এফএম/দীপ্ত সংবাদ