ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনের পর সারাদেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা কেউ গ্রেপ্তার আবার কেউ পালাতক। এ প্রেক্ষাপটে সরকার কার্যক্রম গতিশীল রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করেন।
কিন্তু দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নে এর ব্যতিক্রম। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন স্বপন ৫ আগস্টের পর নিজ অফিসে বসে সেবা দেন। গত ১৭ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২৩ নভেম্বর তার মেয়াদও শেষ হয়।
এদিকে রামনগর ইউনিয়ন পরিষদেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। সেখানে মেয়াদ শেষের আগ পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার কামাল উদ্দিন ও প্যানেল চেয়ারম্যানরা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম কখনো আত্মগোপনে আবার কখনো প্রকাশ্যে পালন করতেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রশাসক না দেয়ায় জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দাগনভূঞা সদর ইউনিয়ন ও রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ গত ২০ নভেম্বর শেষ হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এতে করে জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদপত্র, পারিবারিক সনদপত্র, বয়স্ক, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, নাগরিক সনদপত্র, ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তা অফিসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। সেবাপ্রত্যাশীরা ইউপি ভবনে গিয়ে ফিরে যান। আবার অনেক সময় সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সঙ্গে কাটাকাটি হয়। একদিকে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে অপরদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইউপি ভবন খুললেও সেবাগ্রহীতারা ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আবার সেখান থেকে উপজেলাতে এসে ভিড় করছেন কিন্তু মিলছে না কোনো সেবাই।
মো. শফিক মিয়া নামে এক সেবাগ্রহীতা জানান, জরুরি কাজে সদর ইউনিয়নে স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে হবে। আবেদন করে সেখানে যাওয়ার পর বলেছে কেউ নেই কাজ করার, চলে যান।
জুলেখা আক্তার নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, ছেলের পাসপোর্ট বানাতে একটি নাগরিক সনদের জন্য রামনগর বোর্ড অফিসে গিয়েছিলাম। তারা বলছে কাজ বন্ধ আছে, পরে আসিয়েন। এবার আমার ছেলের পাসপোর্টের কাগজপত্র কবে জমা দিব তা বলতে পারছি না।
রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মনোয়ারুল আজিম বলেন, জনসাধারণের আক্রোশের মুখে আছি। সেবাগ্রহীতারা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ। কোনোরকম জনসাধারণকে বুঝাচ্ছি। এখানে আমাদের কি করার আছে বলেন? উপর থেকে আমাদের জানানো হচ্ছে, প্রশাসক আসবে। কিন্তু কবে আসবে সেটা আমাদের নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি।
দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই লিখিত ও মৌখিকভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দীর্ঘদিনেও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স. ম আজহারুল ইসলাম জানান, দুটি ইউনিয়নের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। ইতোমধ্যে দুজনের নাম প্রস্তাব করে প্রশাসক নিয়োগের জন্য স্থানীয় সরকার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।