ঠাকুরগাঁওয়ে তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির প্রভাবে ঝরে যাচ্ছে আম ও লিচুর গুটি। এতে বড় অঙ্কের লোকসানের শঙ্কায় পড়েছে বাগানিরা। এদিকে গাছে সেচ ও কীটনাশকের মিশ্রণ স্প্রে করার পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
সরেজমিনে দেখা যায়, আম লিচুর জেলা হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে উত্তর সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের। এ বছর জেলায় ৩ হাজার ২৩৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে; যা থেকে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদের লক্ষমাত্রা ছিলো কৃষি বিভাগের। অপরদিকে ১ হাজার ৮৪২ একর একর জমিতে হয়েছে লিচুর আবাদ হয়েছে; যা থেকে প্রায় ১ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন লিচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে তীব্র তাপদাহের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয়ে রয়েছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, বিগত কয়েকদিনে জেলায় সারাদিনে ৩৭ থেকে ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের আম বাগানগুলোতে দেখা যায়, তীব্র গরমে ঝরে পড়ে যাচ্ছে আম ও লিচুর এক থেকে দেড় মাস বয়সী গুটিগুলো। গুটি ঝরা কমাতে নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দিচ্ছে বাগানিরা। তবে সেচ ও স্প্রে করলেও দিলেও অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে গুটি ঝরা কমানো যাচ্ছেনা।
বাগানিরা বলছেন, ইতিমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ আম-লিচুর গুটি ঝরে গেছে। এ সমস্যার কোনো সমাধান পাচ্ছেনা চাষিরা। চলমান দাবদাহ অব্যাহত থাকলে ও দ্রুতই বৃষ্টি না হলে প্রায় অর্ধেক ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবার শঙ্কায় রয়েছে জেলার বাগানিরা।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে আমের মুকুল অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম এসেছে। মুকুল আসার পর থেকে হয়নি বৃষ্টি। পাশাপাশি বাতাসের আর্দ্রতা হ্রাস পেয়েছে। মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। ফলে আম ও বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল শুকিয়ে যাচ্ছে। পানি সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও আমের গুটি রক্ষা করা যাচ্ছে না।
ভেলাজন এলাকার আম চাষি রফিক জানান, স্বাভাবিক নিয়মেই আমের গুটি ঝরে পড়ে। কিন্তু এ বছর দীর্ঘ খরায় অন্য বছরের তুলনায় গুটি অনেক বেশি ঝরছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের আকচা এলাকার লিচু চাষি রবিউল বলেন, এ বছর আমার লিচু বাগানে মোটামুটি সন্তোষজনক পরিমানে মুকুল এসেছিল; যা থেকে লিচুর গুটিও ছিলো ভালোই। তবে দাবদাহে লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। এবার ভালো ফলন পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।
বড়বাড়ি এলাকার লিচু বাগান আজমল বলেন, ৫ বছরের চুক্তিতে লিচু বাগান ক্রয় করেছি। বাগান থেকে গতবছর কোটি টাকার লিচু বিক্রি করে থাকি। তবে এ বছর হয়তো আর সে রকম আশা করা যাচ্ছে না। এ বছর খরচও বেড়েছে বেশি। এরকম দাবদাহ অব্যাহত থাকলে লিচু বাগানে লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন উঠান বৈঠক এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছি। ফলের গুটি ঝরা কমাতে সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বা প্লাবন সেচের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে আমরা বেশি বেশি ইউরিয়া মিশ্রণ স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।
মঈনুদ্দীন তালুকদার/ এজে/ দীপ্ত সংবাদ