শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

জাল সনদে বিদেশ যাত্রায় ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে নারীরা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

জাল সনদে বিদেশ যাত্রায় ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে পড়ছেন নারীরা। অনেকেই অবৈধ উপায়ে তৈরি করছেন প্রশিক্ষণের জাল সার্টিফিকেট। এজেন্সির খপ্পরে পড়ে নারীরা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের দক্ষ করে তবেই যেন নারীরা বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন এমন আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে প্রায় শতাধিক নারী নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশের ফিরেছেন। তাদের প্রায় প্রায় ৯৫ ভাগই সরকারের নির্দেশিত রোডম্যাপ ছাড়া অবৈধ পথ অনুসরণ করে বিদেশে গিয়েছেন। নেননি প্রশিক্ষণ, বানান জাল সার্টিফিকেট। এমন পরিস্থিতেও বিদেশগামী নারীদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি হচ্ছে না। নিজদের দক্ষতা তৈরিতে প্রশিক্ষণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছেন, প্রশিক্ষণবিহীন অদক্ষ নারীরা বিদেশের মাটিতে মারাত্মক ঝুঁকির সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। আর বিশেজ্ঞরা বলছেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশ গেলে নারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সম্মুখীন হতে হবে নানা রকম বিড়ম্বনার। নিজদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ ও হেনস্থার শিকার হতে বাঁচতে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশে কর্মসংস্থানে আগ্রহী নারী কর্মীদের ট্রেনিং ও সার্টিফিকেট সংক্রান্ত বাধ্যতামূলক কিছু নির্দেশিকা জারি করেছেন। সরকার প্রদত্ত প্রশিক্ষণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুইমাসব্যাপী গৃহপরিচারিকা প্রশিক্ষণ। মূলত বিদেশযাত্রার সকল জটিলতা এড়াতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেখা গেছে, কতিপয় অসৎ রিক্রুটিং এজেন্সি বাধ্যতামূলক এই ট্রেনিং সার্টিফিকেটটি জাল করার মাধ্যমে কার্যসিদ্ধির অসাধু প্রচেষ্টা করে থাকে। এইসব জাল ডকুমেন্টসমূহ প্রথাগত পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স বিএমইটিতে জমা হয়ে থাকে। পদ্ধতিটি ম্যানুয়াল হওয়ায় বিএমইটি কর্তৃক সঠিকতা যাচাই করার সুযোগ থাকে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিদেশগামী নারী কর্মীরা বেশিরভাগ সময়ই এর ভুক্তভোগি হয়ে থাকেন এবং প্রবাসে অনিশ্চয়তার জীবন যাপন করেন।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর এসব কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বিএমইটি, নারী কর্মীদের জন্য অনলাইন ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স চালু করেছে। প্রথাগত ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতিতে দুর্নীতির সুযোগ থাকলেও অনলাইন ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি সম্পূর্ণ ডিজিটাল হওয়ায় এতে দুর্নীতির সুযোগ নেই। প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে উপস্থিতি গণনার ডিজিটাল যন্ত্র থাকায় সকলকেই স্বশরীরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এতে অসাধুতা অবলম্বনের সুযোগ কমেছে। সরকার কর্তৃক এমন অভাবনীয় উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয় এবং কার্যকরীও বটেও মনে করছেন অভিজ্ঞরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি তাদের অসাধু কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সরকারের এই উদ্যোগকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে দেশের বাইরে বিপদে পড়ছেন নারীরা।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচি প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, এখন আর কোনো নারীকে দুই মাসের প্রশিক্ষণ ছাড়া দেশের বাহিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তারা যদি অন্য কোনো পথ অনুসরণ করে বিদেশ যায় তাহলে অবশ্যই হেনস্থার শিকার হতে হবে।

বাংলাদেশকোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী লুৎফর রহমান বলেন, যারা বিদেশ যেতে আগ্রহী নারীপুরুষ সবার জন্যই প্রশিক্ষণ আবশ্যক। এক্ষেত্র নারীদের প্রশিক্ষণ আরও বেশি জরুরি। নারীরা যদি প্রশিক্ষণ ছাড়া নিজেকে ডেভেলপমেন্ট না করে বিদেশের মাটিতে পা রাখে তাহলে তাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সে বিদেশ গিয়ে কি করবে কোন জব করবে কোনটাকে অগ্রাধিকার দেবে সেই আলোকে বাংলাদেশে থাকতে তাকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কোঅর্ডিনেটর শাহানা হুদা রঞ্জনা বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করা ব্যাতিত বিদেশে যাওয়া নারীদের বড় ধরণের ঝুঁকি। এছাড়া আসা করবো নারী শ্রমিকদের বিদেশ পাঠানোর সময় সবচেয়ে আগে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত যেন সরকার করে। আমরা আমরা চাই আমাদের মেয়েরা কাজ নিয়ে দেশেবিদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। রেমিট্যান্স আয়ে পুরুষের পাশাপাশি তাদেরও ভূমিকা থাকুক। কিন্তু এর বিনিময়ে কোনোভাবেই নারীর অমর্যাদা আমাদের কাম্য নয়।

মাসুদ/দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More