আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে গাইবান্ধার সাত উপজেলায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরিতে কারিগররা।
খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন প্রতিমা। এবার গাইবান্ধার ৬৫০টি মন্ডবে পুরোদমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। পূজাকে গিরে জেলার আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
আগামী ২০ অক্টোবর থেকে শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি কারিগরদের ব্যস্ততা। দিনভর চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। নরম হাতের ছোঁয়ায় ফুঁটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবি দূর্গা, স্বরস্বতি, লক্ষী, গণেশ, কার্তিকসহ বিভিন্ন দেব–দেবতার মুর্তি। ইতি মধ্যে প্রতিমা তৈরির অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কোথায় চলছে নতুন প্রতিমা তৈরি আবার কিছু কিছু প্রতিমায় চলছে শিল্পীদের তুলি আঁচর। রং করার পর মূর্তিগুলোকে বিভিন্ন অলংকার দিয়ে সাজিয়ে প্রতিমার রুপে উপযোগী করা হবে।
প্রতিমা তৈরির কারিগর অধীর পাল বলেন, আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা তা আর হচ্ছে না।
প্রতিমা কারিগর রাজেস পাল জানান, এখন আমরা খুবি ব্যস্ত। কারণ আর মাত্র কয়েক দিন আসে পূজার। তাই দিনরাত কাজ করছি। কোন কোন প্রতিমায় ঘোষামাঝা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই কোনো কোনো প্রতিমাতে রং তুলির কাজ চলছে। আশা করছি পূজার একদিন আগেই সব কিছু শেষ হবে।
শহরের ভিএইড কালীবাড়ি দূর্গা মন্দিরের পুরোহিত দীপ মুন্সি জানান, চলতি বছর দেবী দুর্গা আসছেন শিবের বাসস্থান কৈলাস থেকে গজে (হাতি) করে, যাবেন নৌকায়। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুজা উদযাপন পরিষদ জাতীয় কমিটির সদস্য রণজিৎ বকসী সূর্য বলেন, ‘সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা আগামী ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী এই উৎসবের।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ইবনে মিজান বলেন, দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলার আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সকল পূজা মন্ডপ আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। শারদীয় দুর্গাৎসব সফল করতে মতবিনিময় সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুত সরবরাহ, পূজা মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, মণ্ডপের সুরক্ষার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।
উল্লেখ্য, আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ১৯ অক্টোবর মহা পঞ্চমী, ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২১ অক্টোরর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে পাচঁ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে, এবার গাইবান্ধায় ৬৫০টি মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে, গত বছরের পূজা অনুষ্ঠিত ছিল ৬৪২টি।
ভবতোষ রায় মনা/শায়লা/দীপ্ত নিউজ