শনিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
বিজ্ঞাপন
শনিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ক্যাপস ও প্রতিচ্ছবি’র আয়োজনে শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

দীপ্ত নিউজ ডেস্ক
15 minutes read

ক্যাপস ও প্রতিচ্ছবি এর আয়োজনে “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের বিপর্যয় ও ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডি আর ইউ), সেগুনবাগিচা, ঢাকাতে, বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এবং প্রতিচ্ছবি এর যৌথ আয়োজনে “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট পরিবেশের বিপর্যয় ও ঝুঁকি মোকাবেলায় করণীয়” শীর্ষক এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিচ্ছবির সভাপতি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্লানার্স (বিআইপি) এর প্রেসিডেন্ট, প্রফেসর ড. আদিল মোহাম্মদ খান। সেমিনারটিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা আল মামুন; ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল; ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. এম মাহবুব হোসাইন এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও জিন বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মাহফুজুল কাদের (হেলাল)। সেমিনারটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্লানার্স (বিআইপি) এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলার চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করা জরুরি। আমাদেরকেই আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের নতুন বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে হলে রাজপথ থেকে কাজ শুরু করতে হবে। আমাদের নগরায়নের কৌশল পাল্টাতে হবে এবং তরুণদেরকে দখলদারদের মুখোমুখি হয়ে একটি সুন্দর পরিবর্তন আনতে হবে।

সেমিনারের মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন তেল, গ্যাস এবং কয়লার ব্যবহার থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের ফলে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা রিনিউয়েবল এনার্জি এই সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কার্বন নিঃসরণ ৯০% হ্রাস করার একটি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই সম্ভব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, আমাদেরকে খুব সহজ ভাষায় পরিবেশকে বুঝতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনকে বুঝতে হবে এবং এর বিরুপ প্রভাবকেও উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই আমরা একজন পরিবেশবিদ হতে পারবো। বাংলাদেশকে নিয়ে করা সকল পরিকল্পনাকে শুধু পরিকল্পনা হিসেবে ফেলে না রেখে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে এর জন্য এসকল অঞ্চলের জন্য গঠিত পরিকল্পনাকে কার্যকরী পদক্ষেপের আওতাভুক্ত করতে হবে।

ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর অধ্যাপক ড. এস এম মোস্তফা আল মামুন বলেন, আমার পাঠদানের বিষয়ের সাথে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন সরাসরি যুক্ত না থাকলেও আমরা সবাই পরিবেশ বিপর্যয়ের ভুক্তভোগী। আমরা নিজেদের বিলাসিতার জন্য পরিবেশকে যেভাবে নষ্ট করেছি সেটি উন্নয়নে আমাদেরকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি প্রোগ্রামের ম্যাথমেটিক্স অ্যান্ড ন্যাচারাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ড. এম মাহবুব হোসাইন বলেন, আমরা জলবায়ু ইস্যুতে কম্প্রোমাইস করছি বটে তবে একেবারে ছেড়ে দিলে চলবে না। পরিবেশকে বাঁচাতে চাইলে আমাদের স্বভাবকে পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের আচরণের পরিবর্তনই পারবে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে।

বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনিয়াস নলেজ (বারসিক) এর সমন্বয়ক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফলসরূপ প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে প্রতি বছর বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় চলে আসে এবং বস্তিতে বসবাস করতে শুরু করে। এই জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে কোন উন্নয়নই সম্ভব নয় তাই তাদের কথা মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব নগরায়ন করতে হবে। এক্ষত্রে যুব সমাজকে এই জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করতে হবে কারণ জলবায়ু পরিবর্তনে এরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট) এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের দেশের ৫১০% মানুষ নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করে। তাদের যাতায়াতে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি যেভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে তার ফল ভোগ করছে প্রান্তিক মানুষজন। আমাদেরকে এই জীবাশ্ম জ্বালানির সঠিক প্রতিস্থাপন নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশেদুজ্জামান মজুমদার বলেন, ২০২৩ সালে নভেম্বর মাসে গৃহীত এনার্জি মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেয়া হয়নি। আমাদের সত্যিকার অর্থে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার বাড়াতে হলে জ্বালানি মাস্টারপ্ল্যানে সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের টার্গেট ঠিক করতে হবে। অন্যথায় বড় বড় এইসব পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি কিংবা জলবায়ু পরিস্থিতির উন্নয়ন কোনটাই সম্ভব হবে না।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার মো: নাছির আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের অনেক বেশী গবেষণা প্রয়োজন, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন এর ফলে কি পরিমান ক্ষতি ইতোধ্যে হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ হতে পারে তা বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধিতিতে নিরুপণ করতে হবে। ফরমাল এবং ইনফারল সকল সেক্টরে জলবায়ু শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সাসটেইনেবল রিসার্চ এন্ড কনসালটেন্সি লিমিটেড (এসআরসিএল) এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আবু জুবায়ের বলেন, আমার মতে যুবসমাজের পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তরুণ সমাজকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমাধান কল্পে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে।

এছাড়া উক্ত সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাপস গবেষণা সহকারী ও প্রতিচ্ছবি এর প্রতিনিধিগণ সহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংস্থার সদস্যবৃন্দ।

আল/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

সম্পাদক: এস এম আকাশ

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.