এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ যখন দরজায় কড়া নাড়ছে ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের অধিনায়ক করা হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। গত ৩ আগস্ট ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। এরপরই পুরোনো দায়িত্ব নতুন করে দেওয়া হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের কাঁধে।
তবে বিশ্ব আসরের মতো বড় মঞ্চের ঠিক শেষ মুহূর্তে দায়িত্ব পেয়ে কতটা সফল হবে সাকিব আল হাসান?
আপাতত এশিয়া কাপের জন্য ১৭ জনের দল ঘোষণা করেছেন নির্বাচকরা। যে দলে আছে কিছু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তরুন। সেই সাথে আছে বিশ্বসেরা সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞরা। সেই দলকে ভালো না বলার কোনো সুযোগ নেই।
এশিয়া কাপের পর পরই অনুষ্ঠিত হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, সেক্ষেত্রে দুই একটা পরিবর্তন ছাড়া এশিয়া কাপের দলটায় সম্ভাব্য বিশ্বকাপের দল।
যেহেতু ২০২৩ বিশ্বকাপ ভারতে হবে , তাই বাংলাদেশ ও এশিয়ার দল গুলোর জন্য এটা বড়ই স্বস্থির। তাই ভারত ও বাংলাদেশের আবহাওয়া তুলনামূলক একই হওয়ায় বাংলাদেশের কিছুটা সম্ভবনা থেকেই যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এবার আসি বিকল্পের কথায়- কারো বিকল্পই কেউ সমান ভাবে হয় না এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের পাইপ লাইনে ভারত বা ইংল্যান্ডের মতো খুব বেশি শক্তিশালী খেলোয়াড় নেই। তাহলে কি করার? আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে যেসব খেলোয়াড়রা আছে তাদের থেকে সেরা খেলোয়াড়দের নিয়েই এশিয়া কাপের দল দিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
৩০ আগস্ট থেকে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে যৌথভাবে বসছে এশিয়া কাপের ১৬ তম আসর। এরপর ভারতে বসতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহাযজ্ঞ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩ তম আসর। এত বিশ্বকাপের ভিড়েও ৫০ ওভারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আবেদনটাই আলাদা, অন্তত বাংলাদেশের কাছে। কারণ, এই সংস্করণেই বাংলাদেশ সবচেয়ে সফল আর বিশ্বকাপটা ভারতের মাটিতে হওয়ায় প্রত্যাশাও বেশি। এই বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন- নিজের পুরোনো রাজ্যের রাজা হয়ে ফেরা সাকিব আল হাসান। যার কিনা এই ২০২৩ বিশ্বকাপে রানিং খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ রান- ১১৪৬, ইনিংস- ২৯, সেঞ্চুরি-২, ফিফটি-১০, সর্বোচ্চ- ১২৪* ও ৩৪ টি উইকেট নিয়ে ৪র্থ সর্বাদিক উইকেট শিকারির তালিকায় রয়েছেন।
আমাদের আছেন একজন ড্যাসিং ওপেনার ও একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ৩ ফরম্যাটে সেঞ্চুরি করা তামিম ইকবাল খান। যেকিনা লড়ে যাচ্ছেন ইঞ্জুরি নামক যুদ্ধকে পরাস্ত করে বিশ্বকাপে ২২ গজ কাপানোর অপেক্ষায়। এই বিশ্বকাপে রানিং খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের দিক থেকে তামিমের অবস্থান সেরা দশের ১০ নম্বরে ৭১৮ রান।
ডিপেন্ডেবল মুশফিক হলেন অধ্যবসায়ী ভালো ছাত্র, কঠোর অনুশীলন আর প্রতিজ্ঞা বিশ্বকাপের মঞ্চ তাঁর সেরাটাই দেখানোর জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠবে আশা করছেন বাংলার কোটি ভক্ত। এই বিশ্বকাপে রানিং প্লেয়ারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের দিক থেকে মুশির অবস্থান সেরা দশের ৭ নম্বরে ৮৭৭ রান।
সেই সাথে আমাদের তাসকিন, শান্ত, লিটন, মিরাজের মতো টগবগে খেলোয়াড়েরা যেমন মাঠকে উজ্জীবিত রাখেন, তেমনি নতুন তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিম, আমাদের নতুন আশায় বুক বাঁধতে প্রাণিত করেন।
এর আগে বিশ্বকাপ নিয়ে আশার কথা জানাতে গিয়ে কাপ্তান সাকিব বলেন- আমরা শুধু বলব, বড় স্বপ্ন রচনা করুন, ২০২৩ সালে আমরা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হব। এটা যদি হয়, পুরো দেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, এই সাফল্য অন্য অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য ছিনিয়ে আনার প্রেরণা হয়ে দেখা দেবে। আর যদি চ্যাম্পিয়ন না হই? তাতেও কোনো ক্ষতি নেই। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করে চ্যাম্পিয়ন হতে না পারার মধ্যে কোনো অগৌরব নেই, কিন্তু আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে আসিনি- এ রকম ভাবাটা শুধু অগৌরবের নয়, অপরাধ বলে গণ্য হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা অভিজ্ঞ দল। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমদের দেড় যুগ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি রয়েছে ৪ টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা। লিটন দাস, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল হোসেন শান্তরাও এখন অভিজ্ঞ।
পরিশেষে, একজন ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে এটাই প্রত্যাশা, বিশ্বমঞ্চে ভালো করুক সাকিবের বাংলাদেশ, লাল সবুজের বাংলাদেশ। শুভকামনা টিম টাইগার্স।
লেখক : তাকি বিন মহসিন
সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী
আল/ দীপ্ত সংবাদ