শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

‘আমাকে সব দিলেও আর আমি ছেলেকে ফিরে পাবো না’

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আমার একমাত্র ছেলে ছিল সাদ। বড় ইচ্ছে ছিল ছেলে কুরআনের হাফেজ হবে, এ জন্য স্কুলে ভর্তি না করে মাদ্রাসায় দিয়ে ছিলাম। দুই পাড়া কুরআন মুখস্তও করেছিল কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। আমার ছেলের তো কোন অপরাধ ছিল না, তাহলে পুলিশ কেন গুলি করল। আমাকে সব দিলেও আর আমি ছেলেকে ফিরে পাবো না।

কান্নাজড়িতে কণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পুলিশের গুলিতে নিহত ১৪ বছরের শিশু সাদ মাহমুদের বাবা বাহাদুর খান। গত ২০ জুলাই বিকেলে সাড়ে পাঁচটার দিকে ঢাকার সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের দৃশ্য দেখতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদ।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে নিহত শিশু সাদের গ্রামের বাড়িতে আলাপকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাদরে বাবা বাহাদুর খান বলেন, ‘আমার ছেলের মত আর কারও সন্তান যেন পুলিশের গুলিতে মারা না যায়। আমার ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইবো। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই, তিনিই আমার ছেলে হত্যার বিচার করবেন।

ঢাকার সাভারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছিল। ওই সময় সাভারের শাহীবাগ এলাকায় ভাড়া বাসার ছাদে ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে খেলাধূলা করছিল সাদ মাহমুদ। খেলার সময় ছাদ থেকে পাশের চাপাইন সড়কে ধোয়া দেখতে পায়। পরে সেই দৃশ্য দেখতে নিউমার্কেট এলাকায় যাওয়ার পরপরই পুলিশের গুলিতে আহত হয় সে। পরে স্থানীয় লোকজন সাদকে এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ১৪ বছরের শিশু সাদকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায় সে।

দুই বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার ধল্লা খানপাড়া গ্রামের বাড়িতে আসেন। কিন্তু সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য বাহাদুর খান পরিবার নিয়ে ঢাকার সাভারের শাহীবাগ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। স্ত্রীতিন সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার তার। তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ছিল সাদ। বড় মেয়ে তাসলিমা খানম নাজনীন (২০) সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ফর্মাসী বিভাগেরর অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সাদ সাভারের শাহীবাগ এলাকায় জাবালে নূর দাখিল মাদ্রাসায় ষষ্ঠশ্রেণিতে পড়তো। ছোট মেয়ে আফরোজা খানম নসুরাত () একই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

সিংগাইর উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ধল্লাপাড়া গ্রামে সাদের বাড়ি গিয়ে এক করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে। বাড়ির ভেতরে আধাপাকা টিনে ঘর, ঘরের সামনে উঠানে একটি চেয়ারে নির্বাক হয়ে বসেছিলেন সাদের বাবা বাহাদুর খান। ছেলে হারানোর বেদনায় অশ্রুশিক্ত চোখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তার পাশেই বসে ছিলেন সাদে চাচাতো দাদাসহ আত্নীয়স্বজনেরা।

বাহাদুর খান বলেন, ’২০ জুলাই আমার ছেলে ও তার ফুফাতো ভাইয়ের সঙ্গে খেলাধুলা করতে ভাড়াবাসার ছাদে যায়। সেখান থেকে পাশের চাপাইন সড়কে ধোয়া দেখতে পায়। পরে সেখানে গেলে নিউমার্কেপের পাশের পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয় সাদ। পরে স্থানীয় লোকজন এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। ছেলেকে সাদে না পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনদের কাছে খোজখরব নিতে থাকি। সেখানে সড়কে ছেলের জুড়া পড়ে আছে, কিন্তু আমার কলিজার ধন নাই। পরে লোকজনের মাধ্যমের জানতে পারি ছেলেকে এনাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার কলিজার টুকরা আর নাই, লাশ হয়ে পড়ে আছে। এসময় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সাদ মারা যায়। তার বাম পায়ের উরুতে গুলি লেগে বিশাল ছিদ্র হয়। ছেলে হারানোর এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাদের বাবা।

এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাদের মা হালিমা আক্তার। কথা বলতে পারছেন না, অনেকটা নির্বাক। এ জন্য তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। ঘটনার দিন রাতেই সাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরের দিন বুধবার(২১ জুলাই) সকালে ধল্লা গ্রামের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সাদকে চিরনিদ্রায় সায়িত করা হয়।

চন্দন / / দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More