টাঙ্গাইল হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. সাহিদা আক্তার প্রতিষ্ঠানে অলিখিত এক সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সিন্ডিকেটের প্রভাবে বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জিম্মি। ডা. সাহিদা ও তাঁর তিন সিন্ডিকেটের শিক্ষকরা জড়িয়েছেন নানা অনিয়মেও। প্রতিবাদ করলেই নানা রকমের হয়রানি ও হুমকি দেওয়া হত।
এভাবে প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়ে পিছিয়ে পড়ছেন অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, ডা. সাহিদা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি ও হোমিওপ্যাথি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার রায়ের ঘনিষ্ঠজন। ২০০৭ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান তিনি।
আর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা কাউন্সিল (হোমিওপ্যাথি বোর্ড) সদস্য হওয়ার পর বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদোন্নতিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অনিয়মের মধ্য দিয়ে পদোন্নতি নিয়ে প্রভাষক থেকে সরাসরি অধ্যাপক হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানে তাঁর এসব অনিয়মে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন স্বামী সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহাদৎ হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. তোফাজ্জল।
এসব শিক্ষক নিয়ে কলেজের আর্থিক হিসাবে গরমিল, নিয়মিত কলেজে না আসাসহ নিজেদের নানা অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন অজুহাতে অন্য শিক্ষকদের সব সময় চাপে রাখেন ডা. সাহিদা।
এ ছাড়া নিজের স্বার্থে কলেজের শ্রেণিকক্ষ ও অফিস বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেন। হাজিরা খাতা আটকে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ ও চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার অভিযোগও রয়েছে শিক্ষক সাহিদার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ডা. সাহিদার অন্যতম সহযোগী ডা. শাহাদৎ হোসেন। তিনিও নিয়ম ভেঙে অফিস সহকারী থেকে সহযোগী অধ্যাপক হন। ২০০৭ সাল থেকে ডা. শাহিদার প্রশ্রয়ে কলেজের আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন।
চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি চুক্তিভিত্তিক। জানা গেছে, ২০০৬ সালে গভর্নিং বডির সভায় শাহাদেক অফিস সহকারী/ক্যাশিয়ার থেকে প্রভাষক করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু বোর্ডের রেগুলেশন অনুসারে নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। পরে তথ্য গোপন করে ২০০৯ সালে প্রভাষক পদে বোর্ড থেকে অনুমোদন নেওয়া হয় এবং ২০০৫ ও ২০০৬ সালে বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রভাষকদের বঞ্চিত করে ২০০৯ সালে অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ সালে সহকারী অধ্যাপক হন।
এদিকে ডা. সাহিদার স্বামী হওয়ায় ডা. সৈয়দ এমরান আলম মিঠু কলেজের কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বাদ নিয়ে পদোন্নতি নিয়েছেন। তাঁর শিক্ষাগত সনদ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। ১৯৬৯ সালে জন্ম, কিন্তু এসএসসি পাস করেছেন ১৯৮৩ সালে। আবার এসএসসি পাস ১৯৮৩ সালে হলে ডিএইচএমএসে ভর্তি ১৯৮২ সালে। এরপর ১৯৯১ সালে ডিএইচএমএস পাসের তথ্য নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া ডা. তোফাজ্জল বিভিন্ন কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য ও চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণায় জড়িয়েছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ নিয়ে এই কলেজে বহাল থেকে অন্য কলেজের জন্য কাজ করেন। অন্যদিকে এসএসসি ও ডিএইচএমএস পাস করে কিভাবে সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগ পেলেন তা তদন্তের দাবি শিক্ষকদের।
জেলার শিক্ষা অফিসার রেবেকা সুলতানা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর গত সপ্তাহে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। সে কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।