সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। বুধবার (১০ এপ্রিল) সকালে চাঁদপুর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চাঁদপুর
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা প্রায় ৯৫ বছর ধরেই আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জেলার প্রায় ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
সাদ্রা ছাড়াও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো– হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বড়কুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া চাঁদপুরের পাশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।
জানা গেছে, ১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ রামচন্দ্রপুর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের উদ্যোগ নেন।
সাদ্রা দরবার শরীফের বর্তমান পীর মো. আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমরা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি।’
দিনাজপুর
দিনাজপুরের সদর উপজেলাসহ ছয়টি উপজেলায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে দিনাজপুরের শহরের চারুবাবুর মোড়ের পার্টি সেন্টারে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন পুরুষ, মহিলা ও শিশুসহ প্রায় ২৫০ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
এতে ইমামতি করেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মহেশপুর গ্রামে অবস্থিত ফ্যামিলি কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল মাদরাসার প্রতিষ্ঠা পরিচালক মাওলানা মো. আব্দুর রাজ্জাক।
এ ছাড়া জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা ইউনিয়নের রাবার ড্যাম, ফতেহজংপুর গ্রামে, কাহারোল উপজেলার জয়নন্দ গ্রামে, ১৩ মাইলে, বিরল উপজেলার পশ্চিম বনগাঁ জামে মসজিদ ও বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা বাজার জামে মসজিদে এবং জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি মির্জাপুর জামে মসজিদে ২২টি গ্রামের কয়েকশ মানুষ ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন বলে জানা গেছে।
পটুয়াখালী
সৌদির সঙ্গে মিল রেখে পটুয়াখালীর ২১ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন। সকাল আটটায় কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের উত্তর নিশানবাড়িয়া জাহাগিরিয়া শাহ্সূফি মমতাজিয়া দরবার শরীফ প্রাঙ্গনে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া জেলার সদর উপজেলার ৪ গ্রামে, কলাপাড়ার ৭ গ্রামে, রাঙ্গাবালীর ২ গ্রামে, গলাচিপার ৩ গ্রামে, দুমকির ২ গ্রাম ও বাউফল উপজেলার ৩ গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে এরা চট্রগ্রামের এলাহাবাদ সুফিয়া ও চানটুপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর সৌদি আরবসহ মধ্য প্রাচ্যের মুসলমানদের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদ পালন করেন এ চান টুপি অনুসারীরা। প্রায় ১০০ বছর ধরে তারা আগাম ঈদ উদযাপন করে আসছে।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর উপজেলার বাউকোলা, ভাড়ুখালী, আখড়াখোলা, তলুইগাছা, তালা উপজেলার ইসলামকাটি, কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া, পাইকগাছা, খলিলনগর এলাকার অনেকেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
বরিশাল
বরিশালের ছয়টি উপজেলায় সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করে আসছেন। তারা চট্টগ্রামের চন্দনাইশ শাহসুফি দরবার শরিফ, সাতকানিয়া মির্জাখালী দরবার শরিফ এবং আহমাদিয়া জামাত অনুসারী।
সকাল ৮টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত জেলার ছয়টি উপজেলা বাবুগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী, বাকেরগঞ্জ, সদর উপজেলাসহ মহানগরী মিলিয়ে ১০ হাজারের মত অনুসারী প্রতি বছরের ন্যায় এবারও একদিন আগে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
বরিশাল নগরীর তাজকাঠি, জিয়া সড়ক, টিয়াখালী, হরিনাফুলিয়া এবং সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত। এতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা মো. আবু জাফর।
ঝিনাইদহ
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঝিনাইদহের বিভিন্ন গ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রোজা রেখে পবিত্র ঈদ উদযাপন করছেন।
সকাল ৮টায় হরিণাকুন্ডু উপজেলা মোড়ের গোলাম হযরতের মিল চত্বরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক মুসল্লি।
ঈদ জামাতের আয়োজকরা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা কয়েক বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে থাকেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা, হরিণাকুন্ডু উপজেলার কুলবাড়ীয়া, নারায়নকান্দি, বৈঠাপাড়া, বোয়ালিয়া, চটকাবাড়ীয়া, ফলসী, পায়রাডাঙ্গা, নিত্যানন্দরপুর, শৈলকুপা উপজেলার ভাটই ও জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা থেকে মুসল্লিরা আসেন ঈদের নামাজ আদায় করতে। এছাড়া হরিণাকুন্ডুর ভালকী বাজার, চরপাড়া ও পুড়াহাটি এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।
হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউর রহমান জানান, হরিণাকুন্ডুতে তিনটি জায়গায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কিছু মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার স্বার্থে যেখানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে; সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
লালমনিরহাট
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন করছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার মুন্সিপাড়ায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুল মাজেদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার, সুন্দ্রহবী, কাকিনা, চাপারহাট, চন্দ্রপুর, আমিনগঞ্জ ও মুন্সীপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের মুসল্লিরা বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে রোজা ও ঈদ করেন এসব গ্রামের মুসল্লিরা।
হাড়িশহরের মুন্সিপাড়ার ঈদগাহ মাঠের সভাপতি আব্দুল ছাত্তার বলেন, সৌদির সঙ্গে মিল রেখে বিগত কয়েক বছর ধরে এ এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, শবে–কদর, শবে মেরাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে আসছেন।
একদিন আগে কেন ঈদের নামাজ– এমন প্রশ্নে ইমাম আব্দুল মাজেদ বলেন, কুরআন থেকে জেনে ঈদ আমরা পালন করে আসছি, এখানে কোনও ভুল নেই।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির জানান, সৌদির সঙ্গে মিল রেখে অনেক আগে থেকে কাকিনা–তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি, চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বোতলা ও পানি খাওয়ার ঘাট এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করে আসছে কিছু মানুষ। নামাজ আদায়ের সময় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় দুজন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।