টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে সাতটি প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ। এদিকে বন্যা মোকাবিলায় এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ৪ হাজার ৮০২ জন।
শুক্রবার (৩১ মে) সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট। এরমধ্য কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৯৩ হাজার, কানাইঘাটে ৮০ হাজার ৬০০ জন, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৬৫ হাজার, জকিগঞ্জে ৩৯ হাজার ৮৫২ জন ও গোয়াইনঘাটে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন বন্যাকবলিত হয়েছেন।
এছাড়া সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ জন এবং গোলপগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত ১৩টি ইউনিয়ন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, শুক্রবার সকাল ৬টায় সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, সারি নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সুরমা নদীতে পানি বেড়েছে। ফলে নগরের কাজিরবাজারসহ যেসব ড্রেন সুরমায় পড়েছে সেসব ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বদলে উল্টো পানি ঢুকছে। এর জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে যদি আজ দিনের বেলা বৃষ্টি না হয় তবে সে পানি নেমে যাবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বন্যায় উপজেলার ৭৫ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস থাকায় আমরা আগেই ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে শালিক রুমাইয়া জানান, উপজেলার ৩০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ৪৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৭০০ লোক আশ্রয় নিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, ৩৫টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এখনো কোনো লোক আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেনি। উপজেলার ১৪৮টি গ্রামের মধ্যে ৭৫টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সবাইকে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফসানা তাসনিম বলেন, উপজেলার অবস্থা খুবই খারাপ। পানি হু–হু করে প্রবেশ করছে। অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে ১০–১২টি পরিবার।
কানাইঘাট উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা নাসরীন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পানি কিছুটা কমেছে। আমাদের ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৬টি কেন্দ্রে মানুষ উঠেছে। প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, আমাদের এখানে দুটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের কয়েকটি গ্রাম কিছুটা প্লাবিত হয়েছে। ৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী শামীম বলেন, সরকারি হিসেবে এখনো পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০ লোক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গত মানুষের সহায়তার জন্য ত্রাণ সামগ্রীর চাহিদা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। বন্যাকবলিতদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি করা হবে।
এজে/ আল / দীপ্ত সংবাদ