শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫
শনিবার, জানুয়ারি ১৮, ২০২৫

সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট, সপ্তাহে বিক্রি ৩ কোটি টাকা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট ক্রেতাবিক্রেতায় মুখরিত। শুক্রবার ও সোমবার এখানে জমজমাট গুড়ের হাট বসে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতি হাটে গুড় কিনতে শত শত ক্রেতা ভিড় করছেন। স্থানীয় সরোজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিখ্যাত এ গুড়ের হাট বসে।

খেজুরের রস দিয়ে তৈরি ঝোলাগুড় ও নলেন পাটালী বেচাকেনার জন্য এই হাটের ঐতিহ্য কয়েকশ বছরের। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৩ কোটি টাকার গুড় কেনাবেচা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা থেকে কৃষকের ঘরে উঠবে অর্ধশত কোটি টাকা।

শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে চুয়াডাঙ্গাঝিনাইদহ আঞ্চলিক সড়কের পাশে সরোজগঞ্জ বাজারে বসে দেশের ঐতিহ্যবাহী খেজুর গুড়ের হাট। এই হাটটি দেশের বৃহৎ গুড়ের মোকাম হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে।

জেলার কয়েকটি কৃষিপণ্যের মধ্যে খেজুরের গুড় অন্যতম। শীত এলেই খেজুরের রস থেকে গুড় উৎপাদনের জন্য কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। প্রতিবছর শীত মৌসুমে সারাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেজুর গুড়ের বেচাকেনা হয় এ হাটে। স্বাদে ও গন্ধে এখানকার গুড় অতুলনীয়। মৌসুমের প্রায় পুরো সময়জুড়ে স্থানীয় পাইকার, মহাজন এবং বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা ব্যাপারী ও ক্রেতাবিক্রেতার পদচারণে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করে হাট এলাকায়।

জেলা সদরের গোপালনগর গ্রামের হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ২০ বছর ধরে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করছি। প্রতি বছর অগ্রহায়ণের শুরুতে খেজুরগাছ রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করি। রস পাওয়া যায় চৈত্র মাস পর্যন্ত।

জেলার সদর উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন রাঙ্গা বলেন, চলতি মৌসুমে ৩৫টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছি। যা থেকে ৪০০৫০০ কেজি বা ১০ মণ গুড় পাওয়া যাবে। একটি খেজুরগাছ থেকে সপ্তাহে গড়ে ৩ দিন রস সংগ্রহ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে একদিন রস পাওয়া যায় ৪ লিটার। ৮০১০০ লিটার রস জাল দিয়ে ১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি ঝোলাগুড় ২০০২২০ টাকা ও পাটালি ২৫০৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতিটি খেজুরগাছ থেকে এক মৌসুমে ১০১২ কেজি গুড় পাওয়া যায়।

সদর উপজেলার সরাবাড়িয়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে জালা বা (টিনের তৈরি বিশেষ পত্রে) ঢালা হয়। এরপর বড় একটি চুলার ওপর রেখে তা আগুনে জাল দেওয়া হয়। এ সময় অনাবরত রসকে নাড়াচারা করতে হয়। ক্রমান্বয়ে রস শুকিয়ে এলে আঠালো ভাব ধারণ করে। তখন খুব ঘন ঘন নাড়াচারা করে গুড় তৈরি করা হয়। তারপর তা মাটির তৈরি বিশেষ ভাঁড়ে বোঝাই করে বাজারে বিক্রির জন্য নেয়া হয়।

সরোজগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা সাইকেলযোগে আবার কেউ ভ্যানযোগে গুড় এনে বিক্রির অপেক্ষায় বসে রয়েছেন। পুরো এলাকাজুড়ে সাজানো খেজুর গুড়ভর্তি মাটির ভাঁড় ও ছোট ছোট ধামাকাঠায় নলেন পাটালি। ক্রেতাবিক্রেতারা তা দাঁড়িয়ে দেখছেন। আবার কেউ কেউ নিজের বাড়ি বা আত্মীয়ের বাড়ি পাঠানোর জন্য চাহিদা অনুযায়ী কিনছেন। ঢাকা, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ি, পাংশা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারীরা নলেন ও ঝোলা গুড় দরদাম ঠিক করে ওজন দিয়ে তা ট্রাকে তুলছেন। এ বছর গুড়ের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের লাভও হচ্ছে বেশি।

হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া গ্রামের গাছি মজিবর জানান, ২০ বছর ধরে এই হাটে গুড় নিয়ে আসি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা গুড় কিনে নিয়ে যায়। তবে, গুড়ের ভাড়ের দাম বেড়েছে। এ কারণে অনেক সময় কম লাভ হয়।

ঢাকা থেকে গুড় কিনতে আসা রবিউল কাজী বলেন, এখানে ভালো মানের গুড় পাওয়া যায়। তাই সরোজগঞ্জে ছুটে আসি। এখানকার গুড়ে চিনি বা ক্যামিকাল মিশানো হয় না। কিছুটা খয়েরি রঙের হলেও এসব গুড় পুরোটাই খাঁটি। গত বছর থেকে এবার গুড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ থেকে ১৪ কেজি ওজনের এক ভাঁড় গুড় ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, উপপরিচালক, মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, চুয়াডাঙ্গার অন্যতম কৃষি পণ্য খেজুরের গুড়। জেলায় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এর থেকে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হবে। যা থেকে জেলার কৃষকের আয় হবে প্রায় শত কোটি টাকা। বিশুদ্ধ গুড় উৎপাদনের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি যাতে তারা গুড়ের মানটা ঠিক রাখে। নির্ভেজাল খেজুরের গুড় উৎপাদন করে কৃষকেরা জেলার সুনাম ধরে রাখবে এমনটি প্রত্যাশা সকলের।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More