বর্তমান সময়ে রিবন্ডিং চুলের জনপ্রিয়তা বেশ তুঙ্গে। রিবন্ডিং হচ্ছে আঁকা বাঁকা অর্থাৎ ঢেউ পড়া চুলকে সোজা করা। চুলে রিবন্ডিং করলে ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত চুল স্ট্রেইট এবং স্মুথ শাইন থাকে। এছাড়া চুল বুঝে রিবন্ডিং এর প্রকারভেদ ও বিভিন্ন রকম। এ যেমন স্ট্রেইট রিবন্ডিং, সফট রিবন্ডিং, ভলিউম রিবন্ডিং, মিল্ক রিবন্ডিং, সেমি হেয়ার রিবন্ডিং, গ্লোজি রিবন্ডিং। চুলে রিবন্ডিং করানোর কদর এতো বাড়ার কারণ হচ্ছে খুব সামান্যতেই অনেক গোছানো ও পরিপাটি থাকে। চুলে রিবন্ডিং করা থাকলে যেকোনো লুকেই খুব আকর্ষণীয় মনে হয়। তাই বর্তমানের আধুনিক নারীরা চুলের রিবন্ডিং করানোর জন্য পার্লারে ভিড় জমাচ্ছেন। এছাড়া যে সকল নারীরা প্রতিদিন ইউনিভার্সিটি কিংবা অফিসে যান তাদের চুলের ফ্যাশন নিয়ে আলাদা সময় বের করার প্রয়োজন হয় না। ফলে ব্যস্ত জীবন থেকে অনেক সময় বেঁচে যায়। তবে রিবন্ডিং করালেই কিন্তু দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। রিবন্ডিং চুলের জন্য দরকার বাড়তি যত্ন। কেননা রিবন্ডিং করালে চুল অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। রিবন্ডিং করার কিছুদিন পর লক্ষ্য করা যায় যে চুল পড়া, চুল ভেঙ্গে যাওয়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, এবং চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে এ সকল সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নিয়ম অনুযায়ী রিবন্ডিং চুলের যত্ন নিতে হবে। আসুন জেনে নেই কিভাবে রিবন্ডিং চুলের যত্ন নিতে হয়।
রিবন্ডিং করানোর দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত চুল ভেজাবেন না। তিনদিন পর পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিবেন। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে বাসায় বসে নিজেই সেটা করতে পারেন। তিনদিন পর চুলে নারিকেলের তেলের সাথে ভিটামিন–ই ক্যাপসুল মিশিয়ে চুলে ম্যাসাজ করবেন এবং হালকা গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে চুলে পেঁচিয়ে রাখবেন। এরপর ঘন্টাখানেক চুলে তেল রাখার
পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল শ্যাম্পু করবেন। মনে রাখবেন শ্যাম্পু করার সময় বেশি জোরে জোরে চুলে শ্যাম্পু মাখবেন না। এতে করে চুল পড়া এবং ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আলতো করে চুলে শ্যাম্পু ম্যাসাজ করবেন। শ্যাম্পু করে আসার পর চুল ভাগ করে পুরো চুলে প্রোটিন ক্রিম লাগাবেন। চুলের প্রোটিন ক্রিমটি আপনি বাজারের যে কোন ভালো দোকান থেকে কিনে আনতে পারেন। প্রোটিন ক্রিম চুলে ৪৫–৬০ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলবেন। এরপর তোয়ালে দিয়ে আলতো করে পাতলা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে ফ্যানের নিচে চুল শুকাবেন। ভেজা চুল আছড়াবেন না। চুল শুকিয়ে যাওয়ার পরে চিরুনি দিয়ে আছড়াবেন। অনেকেই চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। রিবন্ডিং করা চুলে এটা ব্যবহার করা যাবে না।
রিবন্ডিং করা চুলে সপ্তাহে তিনদিন গোসলের পূর্বে তেল ম্যাসাজ করতে হবে এবং শ্যাম্পু করার পর চুলে ভালো করে কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুতে হবে। এতে করে আপনার চুল পরিষ্কার ও স্মুথ থাকবে এবং রিবন্ডিং এর ও কোন ক্ষতি হবে না।
এছাড়া মাসে একবার পার্লারে গিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্ট অথবা এ্যারোমা ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। চুল সোজা ও মসৃণ রাখতে রিবন্ডিং করানোর পর কমপক্ষে এক মাস চুল বাঁধা যাবে না। কারণ রিবন্ডিংয়ের পর চুল দুর্বল থাকে। এ সময় চুল বাঁধলে চুলের ক্ষতি হয়। তাই রিবন্ডিং করানোর পরের এক মাস চুল বাঁধা নিষেধ। চুলের আগা রেগুলার ট্রিম করতে হবে। এতে আগা ফেটে গিয়ে আপনার চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হবে না এবং দেখতেও ভালো লাগবে। এ ছাড়া রিবন্ডিং দীর্ঘস্থায়ী হয়। নিয়মিত হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন। নিয়মিত হেয়ার সিরাম ব্যবহার চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করে। চুল রিবন্ডিং করা অবস্থায় যেকোনো কেমিক্যাল প্রোডাক্ট, যেমন হেয়ার কালার অন্তত ছয় মাসের মধ্যে না করাই ভালো। কালার করানোর পর অবশ্যই নারিকেলের তেল দিয়ে ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। সময় পেলে ঘরে বসে প্যাক বানিয়ে দিতে পারেন চুলে।একটি ডিমের সাথে পেঁয়াজের রস, ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ১ ঘণ্টা খানিক রেখে চুল ধুয়ে ফেলবেন। এতে করে চুলের খুসকির সমস্যা দূর হবে এবং চুল থাকবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। এ সকল নিয়ম মেনে চললে আপনার রিবন্ডিং চুল থাকবে ঝলমলে সুন্দর।