সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরনের জন্য প্রজনন মৌসুমে সামুদ্রিক মাছ রক্ষায় শুক্রবার (১৯ মে) মধ্যরাত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন নদী, সমুদ্র ও সাগরের মোহনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।
এ উপলক্ষে ফেনীর সোনাগাজীতে মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে শুক্রবার উপজেলার চর খোন্দকার জেলেপাড়ায় জেলেদের নিয়ে সচেতনতা সভা করা হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন। সভায় বক্তব্য দেন ফিশারিজ কর্মকর্তা খায়রুল বাসার, এসডিএফের ক্লাস্টার কর্মকর্তা সুলতানা আক্তারসহ জেলেরা।
সভায় জানানো হয়, সামুদ্রিক মাছের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য মৎস্য বিভাগ মাছ ধরার ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় এসময়ে নদী ও সমুদ্রের মাছ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় করা যাবে না। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থেকে কাজ করছেন। প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে এ ৬৫ দিন নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার জন্য জেলেদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ–এপ্রিলের দুই মাসের নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরায় অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা এবং সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মিলিয়ে বছরে ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় তাদের। এমনিতেই ঘূর্নিঝড়সহ নানা কারণে নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় জেলেদের রোজগার–ব্যবসায় টান পড়ায় তারা ঋণ আর ধার–দেনায় জর্জরিত। এরপর আবার সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কীভাবে পরিবার চলবে, এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন তারা। নিষেধাজ্ঞাকালে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দেওয়া হলেও তা অপ্রতুল বলে দাবি করেন জেলেরা।
জেলেরা আরও জানায়, সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ, চর চান্দিয়া, সদর ও আমিরাবাদ এ চারটি ইউনিয়নে প্রায় ৩ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। সরকারী ভাবে মাত্র দুই হাজার জেলেকে নিবন্ধিত করা হয়েছে। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে নিবন্ধিত জেলেরাও সরকারী সহায়তা পেলেও অন্যরা পায় না। এজন্য তাদেরকে মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়। তাদের দাবি নিষিদ্ধ সময়ে যেন সব জেলে পরিবারকে সরকারিভাবে সহায়তা করা হয়।
চর খোন্দকার জেলে পাড়ার প্রিয় লাল জল দাস বলেন, নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধের সময়ে অনেক কষ্টে তাদের জীবিকা চলে। কেউ কেউ বিভিন্ন সড়কের পাশে জলাশয় ও পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে পরিবারের খাবার জোগাড়ের ব্যবস্থা করেন। অনেক জেলে বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরতে না পারায় ঋণের টাকাও পরিশোধ করতে পারে না। এসময়ে ঋণের টাকা না নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এনজিওগুলোকে বললে তারা উপকৃত হবেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তূর্য সাহা বলেন, উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার নিবন্ধিত জেলে পরিবার রয়েছে। নিষিদ্ধ সময়ে এসব জেলে পরিবারকে সরকারী ভাবে চাল দিয়ে সহায়তা করা হবে। তবে ৬৫দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদেরকে নদীতে না নামতে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে নামলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/আফ/দীপ্ত নিউজ