অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার (২৪ মে) সকাল থেকে একের পর এক বিমান ও স্থল হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৬ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আল জাজিরা, বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—গাজা এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
গাজার উত্তরের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় একাধিক নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আল জাজিরাকে জানান, ইসরায়েলি সেনারা যেন আনন্দ পাওয়ার জন্যই বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। তারা বলেন, উদ্ধারকাজ চালানোর সময়ও উপর্যুপরি হামলার আশঙ্কায় স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপদ দূরত্বে অপেক্ষা করছিলেন।
এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গাজার সংঘাত এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিষ্ঠুর পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানুষের খাদ্য নেই, নিরাপত্তা নেই, সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। ইসরায়েল সীমিত পরিসরে সহায়তা ঢুকতে দিলেও গাজার উত্তরাঞ্চলে এখনো কিছুই পৌঁছায়নি।‘
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৮২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ৩৮২। বেশিরভাগ হতাহতই নারী ও শিশু।
সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সীমিত আকারে কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার (২১ মে) দিনগত রাতে সেখানে প্রবেশ করে ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক, যা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে গাজায় পাঠানো হয়। এর আগে মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজায় প্রবেশ করেছিল আরও ৯৩টি ট্রাক।
তবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানায়, গাজার জন্য প্রস্তুত ১ লাখ ৪০ হাজার টন খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রায় ৬ হাজার ট্রাক এখনো প্রবেশের অপেক্ষায়। এই ত্রাণ প্রবেশ করানো সম্ভব হলে গাজার মানুষের জন্য অন্তত দুই মাসের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সংঘাতের কারণে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ধসে পড়েছে। পানি, বিদ্যুৎ ও ওষুধের তীব্র সংকটে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না হাসপাতালগুলো। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার ২২ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ৮০ শতাংশই এখন মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া খুবই ধীর ও সীমিত বলে দাবি করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একযোগে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর দাবি জানিয়েছে।