১৬
গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি আসা বা বিভিন্ন অঙ্গে পানি জমা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাধারণত ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারীর এ সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় কোষে অতিরিক্ত তরল জমার কারণে এই ফুলে যাওয়া বা ইডিমা হয়।
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর শরীরে প্রায় ২৫ শতাংশ ওজন বাড়ে। এ সময় শরীরের যেকোনো অংশ ফুলে যেতে পারে। তবে হাতে–মুখে পানি আসা, অতিরিক্ত ফুলে যাওয়া, বাড়তি রক্তচাপ, প্রস্রাবে আমিষ বা প্রোটিনের আধিক্য থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কারণ
- গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে রক্তে প্রোজেস্ট্রেরন হরমোনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
- শরীরে পানি জমার এটি অন্যতম কারণ।
- শিশুর আকার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মায়ের শরীরে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি রক্ত ও তরল উৎপাদিত হয়।
- চতুর্থ মাসের শুরু থেকে জরায়ুর আকার বাড়তে থাকে। গর্ভের শিশু যখন বড় হয়, তখন তার মাথার চাপে মায়ের নিম্নাঙ্গের যে শিরাগুলো দিয়ে রক্ত হৃৎপিণ্ডে প্রবাহিত হয়, সেগুলোতে রক্তের চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে নিম্নাঙ্গ থেকে হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। শিরা থেকে তরল বের হয়ে শরীরের টিস্যুতে জমতে থাকে। এতে পায়ে পানি আসে বা ফুলে যায়।
- গর্ভাবস্থার আগে থেকেই বা গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎপিণ্ড বা কিডনিতে অসুখ থাকলেও পায়ে পানি আসতে পারে।
- অনেকক্ষণ কাজ করলে, খাবারে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকলে, অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করলেও পানি জমার পরিমাণ বাড়ে।
কখন সতর্ক হবেন
- হঠাৎ করে হাতে, মুখে অনেক বেশি পানি আসা। সঙ্গে মাথাব্যথা। চোখে ঝাপসা দেখা। বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও কাশি।
- এক পায়ে পানি আসা বা ফুলে যাওয়া, সঙ্গে ব্যথা। গর্ভের শিশুর নড়চড়া কমে যাওয়া (১২ ঘণ্টায় অন্তত ১০-১২ বার নড়া স্বাভাবিক)।
- অতিরিক্ত বমির কারণে পানিশূন্যতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রতিকার
- গর্ভাবস্থায় নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন। ব্যায়ামের ফলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে ও অতিরিক্ত তরল ঘাম হিসেবে বেরিয়ে যায়। তবে কোন ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় উপযোগী, তা জেনে নিতে হবে।
- ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক কাপড় পরার চেষ্টা করুন; যাতে শরীরে চাপ না পড়ে।
- পায়ের ওপর ভর দিয়ে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা ভালো। একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে না থেকে কিছুক্ষণ পরপর কিছু সময়ের জন্য বসুন। বসার সময় পা টুলজাতীয় কিছুর ওপর তুলে রাখতে পারেন।
- আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন।
- লবণ কম খাবেন। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন কলা, কমলা, মিষ্টি আলু, বিট ইত্যাদি খাবেন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি খান। শরীরের অতিরিক্ত পানি কমানোর জন্য পানি খাওয়া আশ্চর্যের মনে হলেও গর্ভাবস্থায় উপকারী। এতে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে, তেমনি অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। তবে চিনিসমৃদ্ধ পানীয়, যেমন সোডা বা প্যাকেটজাত জুস না খাওয়াই ভালো।
ডা. এ টি এম রফিক, নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল