শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

৬ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের বক্তব্যের বিরুদ্ধে ১৯২ বাংলাদেশি-আমেরিকানের বিবৃতি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

 

১৯২ জন বিশিষ্ট বাংলাদেশিবংশদ্ভুত মার্কিন নাগরিক এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যান প্রদত্ত বক্তব্য অসত্য উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওই কংগ্রেসম্যানরা দাবি করেন যেপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা, শিক্ষাবিদ ও যুদ্ধাপরাধ বিরোধী প্রচারকদের সমন্বয়ে বিশিষ্ট বাংলাদেশিআমেরিকানদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা, নিম্নস্বাক্ষরকারী বাংলাদেশিআমেরিকানরা, কংগ্রেসম্যানদের চিঠি থেকে মিথ্যা তথ্য প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করছি।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে দেয়া মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠিতে থাকা এই ‘ভুল তথ্য’কেবল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়ে কংগ্রেসম্যানদের অবস্থানের বিশ্বাসযোগ্যতাকেই ক্ষুণœ করবে না, অধিকন্তুনিম্নস্বাক্ষরকারী বাংলাদেশিআমেরিকানদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘সবচেয়ে খারাপ দিকটি হচ্ছে, (মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের) এই সমস্ত মিথ্যা বিবৃতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলবে।’

বাংলাদেশি হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং তাদের নেতারা বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বাইডেনের কাছে কংগ্রেসম্যানের এই চিঠিকে ‘মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর’বলে অভিহিত করার পরে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের এই বিবৃতি এলো।

কংগ্রেসম্যান বব গুড, স্কট পেরি, ব্যারি মুর, টিম বার্চেট, ওয়ারেন ডেভিডসন ও কিথ সেল্ফ এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন এবং দাবি করেছেন যে ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে।’

তারা দাবি করেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান জনসংখ্যার উপাসনালয় পুড়িয়ে দিয়ে, লুটপাট করে, যাজকদের জেলে বন্দি করে, ধর্মান্তরিত করে এবং পরিবার ভেঙ্গে দিয়ে নিপীড়ন করছে।’

হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য এই কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশ সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করার জন্য ও আসন্ন নির্ধারিত অবাধ ও সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচনে দেশের জনগণকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম সুযোগ দেয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এদিকে, বাংলাদেশী আমেরিকানরা উল্লেখ করেছে যেকংগ্রেসম্যানদের বিবৃতি অক্টোবর ২০০১এর সংসদীয় নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতাকে উপেক্ষা করেছে ওই নির্বাচনে ‘বিজয়ী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতইসলামের নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংস নির্যাতন সংঘটিত হয়েছিল।’

তারা বলেছেন, কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতিতে বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশে খ্রিস্টান জনসংখ্যার নিপীড়ন সম্পর্কে বানোয়াট তথ্য রয়েছে।’ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি রানা দাশগুপ্ত এর আগে বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে হিন্দু জনসংখ্যা অর্ধেক হয়েছে বলে কংগ্রেসম্যানদের দাবি সত্যের অপলাপ।’

দাশগুপ্ত আশঙ্কা করেন, সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য দায়ী কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী মার্কিন আইন প্রণেতাদের ভুল তথ্য দিয়ে ২০২৪ সালের বাংলাদেশের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চেষ্টা করে থাকতে পারে।

বাংলাদেশী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষ নেতা কার্ডিনাল আর্চবিশপ প্যাট্রিক ডি’রোজারিও কংগ্রেসম্যানদের এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, বর্তমান সরকার সবসময় খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে সমর্থন করেছে ও তাদের সঙ্গে রয়েছে।

বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেছেন, ‘বাস্তবতা হলআওয়ামী লীগ ফিরে আসার পর থেকে, আমাদের সম্প্রদায়টি প্রধানমন্ত্রীর (এবং) সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সহায়তায় সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে। এ প্রকল্পগুলো সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।’

বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশন এক বিবৃতিতে বলেছে, কংগ্রেসম্যানদের বিবৃতিতে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় সম্পর্কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে ‘তবুও চিঠিতে উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করার কারণ রয়েছে।’

এক বিবৃতিতে তারা এই অভিযোগকে ‘কাল্পনিক ও বানোয়াট’বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশিআমেরিকানরা অবশ্য এও স্বীকার করেছে যে২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়ন দেখেছিল। ওই নির্বাচনে জামায়াতইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে।

তারা বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই যেহিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য দায়ী একই গোষ্ঠীগুলোই বিদেশী ও ব্লগারঅ্যাক্টিভিস্টদের হত্যা এবং দেশজুড়ে বোমা হামলা চালানোর জন্যও দায়ী।’

এতে আরো বলা হয়, ‘একই গোষ্ঠীর এজেন্টরা ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের লক্ষ্যে ভুল তথ্য সরবরাহ করছেযাতে লঙ্ঘনকারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় আনা হয়।’ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু অধিকারের জন্য সক্রিয়ভাবে লড়াই চালিয়ে যাওয়া এই প্রবাসীরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সুস্থতার জন্য কংগ্রেসম্যানদের চিঠি থেকে ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেনমিলবোর্ন সিটির মেয়র মাহবুবুল আলম তৈয়ব, কাউন্সিলম্যান. নূরন নবী (এমজে), নূরুল হাসান (এনএইচ), রাজ্য প্রতিনিধিআবুল খান (এনএইচ), অধ্যাপক এবিএম নাসির (এনসি), . জিয়াউদ্দিন আহমেদ (পিএ), নবেন্দু দত্ত (এনওয়াই), বিজ্ঞানী ড. সুফিয়ান এ খন্দকার, . জিনা নবী (এনজে), আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়নের পরিচালকইকবাল ইউসুফ, হিউজ নেটওয়ার্কের সিইওনিজামউদ্দিন আহমেদ (ভিএ), প্রকৌশলীরানা হাসান মাহমুদ (সিএ), আহাদ আহমেদ (এমআই), প্রাণবন্ধু চক্রবর্তী (এনওয়াই), লেখক. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত (এফএল), . পূরবী বসু (এফএল), অ্যাক্টিভিস্ট সফেদা বসু (এমএ), সবিতা দাস (এনওয়াই), কমিউনিটি নেতা গোপাল স্যানাল (এনওয়াই), . খন্দকার মনসুর (এনওয়াই), শ্যামল চক্রবর্তী (এনওয়াই), পরিমল কর্মকার (এনওয়াই), সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বজামাল উদ্দিন হোসেন (.), শিল্পীরথীন্দ্র নাথ রায় (এনওয়াই), গৌরব গল্প (ভিএ), সাংবাদিকদস্তগীর জাহাঙ্গীর (ভিএ), সিতাংশু গুহ (এনওয়াই), শিক্ষক. দিলীপ নাথ (এনওয়াই), পিএইচডি ছাত্র তৌজিয়াত আহমেদ (এনওয়াই), ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (এনওয়াই), সৈয়দ রশিদ আহমেদ করমানি (এনওয়াই) প্রমুখ।

 

 

আল/দীপ্ত সংবাদ

 

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More