২০০০ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন ফজিলা খাতুন । অনেক খোঁজাখুঁজির পর পরিবারের সবাই মনে করেন হয়ত মারাই গেছে ৩ সন্তানের জননী ফজিলা খাতুন । মেয়েরা মাকে ফিরে পাওয়ার আশা যখন একেবারেই ছেড়ে দেন ঠিক তখনই জানতে পারেন তাদের মা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থান করছে । এরপর দীর্ঘ ৩/৪ মাস বাংলাদেশ–ভারত হাইকমিশনের চিঠি চালাচালিতে দেশে ফেরেন ফজিলা খাতুন । বাড়ীতে চলছে ঈদের আনন্দ ।
ঝিনাইদহের মহারাজপুর ইউনিয়নের বিষয়খালী খন্দকার পাড়া যেয়ে দেখা যায়, গ্রাম ভেঙে মানুষ এসেছে খয়বার আলী–মোমেনা খাতুনের বাড়ীতে । প্রায় দুই যুগ পর আজ সকালে তাদের নিখোজ হওয়া বড় মেয়ে ফজিলা খাতুন (৫৫) ভারত থেকে বাড়ীতে ফিরেছে । মানষিক ভারসাম্যহীন ফজিলা ২০০০ সালে বাড়ী থেকে নিখোজ হয় । স্বামী ও এক মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি মানসিক বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়েন ।
ফজিলার ৩ মেয়ের মধ্যে ২ মেয়ে ফিরোজা আক্তার ও পিঞ্জিরা আক্তার এখনও বেচে আছে । মাকে ফিরে পেতে পুলিশসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবার কাছেই ছুটে বেরিয়েছিল দুই কিশোরী মেয়ে। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই সন্ধান মেলেনি মায়ের। একপর্যায়ে মাকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল দুই মেয়ে। এরপর গত ৩/৪ মাস আগে তারা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মারফত খবর পান তাদের মা বেচে আছেন । তবে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মডার্ন সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
শুরু হয় দেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় । ত্রিপুরা রাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদ এ ব্যাপারে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন । গত শুক্রবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন মা ফজিলা খাতুন। মাকে ফিরে পেয়ে আবেগে আপ্লুত পুরো পরিবার । এত দিন যাবে মৃত ভেবেছেন তাকে স্বশরীরে কাছে পেয়ে পুরো পরিবারে চলছে আনন্দ ।
বড় মেয়ে ফিরোজা আক্তার জানান, আমাদের বয়স যখন দুই কিংবা তিন, তখন আমাদের বাবা মারা যান। দারিদ্রতার কষাঘাতে সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়া মা আমাদের এতিমখানায় রেখে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। আমরা তখন কিশোরী। এতিমখানায় থাকতে খবর পান মা হারিয়ে গিয়েছেন। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ফজিলা খাতুনের মা মোমেনা খাতুন জানান, পরিবারে চলছে ঈদের আনন্দ । আমার এই জীবণে যে আবার মেয়েকে পাবো তা ভাবতেই পারিনি ।
বাবা খয়বার আলী জানান, সবই আল্লাহর ইচ্ছা । আমার ৫ সন্তানের মধ্যে বড় মেয় হচ্ছে ফজিলা খাতুন ।
পিঞ্জিরা আক্তার জানান, আমি আর আমার জামাই হালিম শেখ মাকে আনতে যাই । বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই যুগ পর আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেন মা।
তিনি জানান, শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুর আড়াই টার দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খুরশীদ আলম জানান, দরিদ্র এ পরিবার একসময় হাল ছেড়ে দিয়েছিল । দুই মেয়ে প্রায়ই আসতো ইউনিয়ন পরিষদে । একসময় মনে হয় ওদের মায়ের সাথে মেয়েদের আর দেখা হবে না । এ মিলনে আমরা সাথে থাকতে পারায় সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার ।
তিনি আরো জানান, মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ফজিলা ২০০০ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবারের লোকজন। পরে, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট ঝিনাইদহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ভারতের সন্ধান মেলে ফজিলা খাতুনের। তবে পরিবারের দাবি মানসিকভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় তিনি কিভাবে ত্রিপুরায় গিয়েছেন সেই তথ্য কেউ জানেন না।
শাহরিয়ার আলম/ আল /দীপ্ত সংবাদ