রবিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৫
রবিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৫

হাসিনার মানবতাবিরোধী মামলার যুক্তিতর্ক শুরু আজ

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তিতর্ক বা আর্গুমেন্ট উপস্থাপন রবিবার (১২ অক্টোবর) শুরু হবে। শনিবার সন্ধ্যায় এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।

এর আগে বৃহস্পতিবার এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শেষ সাক্ষী মো. আলমগীরকে আসামিপক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী জেরা শেষ করেন। ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলো।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আমরা ৫৪ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছি। সাক্ষীদের জবানবন্দীর মাধ্যমে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। অন্যদিকে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনে করি সাক্ষীদের জবানবন্দিতে এখন পর্যন্ত যা এসেছে, তাতে আমার আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারব।

এ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি বাকি দুই আসামি হলেনসাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আলমামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আলমামুন দোষ স্বীকার করে এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন।

জেরার সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম প্রমুখ। এর আগে, ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এরপর যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

সব মিলিয়ে মোট ২৮ কার্যদিবসে এ মামলায় ৫৪ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এবার যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রায়ের দিন ধার্য করবেন ট্রাইব্যুনাল। ৭ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন আমির হোসেন। ৬ অক্টোবর এ জেরা শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম বা সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যকাণ্ড ও ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের মতো জবানবন্দী দেন এই তদন্ত কর্মকর্তা। সেদিনও বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি নিজের জব্দ করা জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা নিয়ে যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয় ট্রাইব্যুনালে। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। এমনকি জুলাইআগস্টে ছাত্রজনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছেন তিনি।

২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের জবানবন্দী শুরু হয়। ওই দিন তার জব্দকৃত ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়। এসব ভিডিওতে জুলাইআগস্টের নির্মমতা ফুটে ওঠে। ২৪ সেপ্টেম্বর এ মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। পরে তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।

মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আলমামুনও ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজের দায় স্বীকার করে আগেই হয়েছেন রাজসাক্ষী। এ ছাড়া সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাইআগস্ট আন্দোলনে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। আর এসবের জন্য দায়ী করে শেখ হাসিনা, কামালসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More