প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে উত্তরের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান পাবনার সুগার মিল।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অর্থায়নে পাবনার ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়ায় ৬০ একর জমির ওপরে প্রতিষ্ঠা করা হয় পাবনা সুগার মিল। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থাপনের কাজ শুরু হয় হলেও ১৯৯৬–৯৭ সালে মাড়াই মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। পরের বছর ১৯৯৭–৯৮ মৌসুম থেকে বাণিজ্যিকভাবে মাড়াই মৌসুম চালু করে কারখানাটি। তবে উৎপাদন শুরুর পর থেকেই লোকসান গুনতে থাকে সুগার মিলটি।
মিলটির দৈনিক আখ মাড়াই করার ক্ষমতা ছিল এক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন এবং বার্ষিক উৎপাদনের ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার মেট্রিক টন। আখ চাষি, সুগার মিল শ্রমিক–কর্মচারীসহ নানামুখী আন্দোলন আর সংকটে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর দেশের বেশ কয়েকটি চিনি কলের সাথে পাবনা সুগার মিলেও আখ মাড়াই কার্যক্রমও স্থগিত ঘোষণা করে শিল্প মন্ত্রণালয়।
মিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নুরুল হোসেন দীপ্ত টিভিকে বলেন, ‘এটা এক প্রকার মৃত। আমাদের মৃত লাশ পাহারা দিতে হচ্ছে। অথচ তিনবছর আগেও এখানে হাজার হাজার মানুষের কোলাহল থাকতো। গাড়িভর্তি আখ নিয়ে আসা হচ্ছে। কোনো ক্রেতা–ব্যবসায়ীদের আগমন ছিল। আশপাশে অনেক দোকানও ছিল। এখনই কিছুই নেই খালি জঙ্গল আর জঙ্গল। সব শ্রমিক–কর্মচারীরা পাশের জেলাগুলোর মিলে বদলি হয়ে গেছে। আমরা কয়জন আছি শুধু এই লাশ পাহারা দিতে। ভাবতেই কেমন যেন লাগে। আমরা চাই মিল যেন আবার চালু ব্যবস্থা করুক সরকার।
পাবনা সুগার মিলের আখচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী দিলু দীপ্ত টিভিকে বলেন, ‘পুরো জেলায় প্রায় ৫–৬ হাজার বিঘা জমিতে আখ চাষ হতো। সেসব জমিতে এখন অন্য ফসল আবাদ হতো। আখ একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং লাভজনক ফসল ছিল। মিলটি বন্ধ হওয়ার জেলার প্রায় ৩ হাজার কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। আমি নিজেই ২৫–৩০ বিঘা জমিতে আখচাষ করতাম। এখন অন্য ফসল আবাদ করি।
এই মুহুর্তে সরকারের তেমন উদ্যোগ নেই। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক পার্টনারশিপে চালুর ব্যাপারে চেষ্টা চলছে বলে জানালেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। তিনি দীপ্ত টিভিকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে চালুর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে অনানুষ্ঠানিভাবে আলোচনা চলছে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে পার্টনারশিপে মিলটি চালু করা যায় কি–না। এমনটি হলো ভালো হবে। কারণ– শুধু চিনি দিয়ে মিলটি চালু রাখা সম্ভব নয়। চিনি কাজ হয় মাত্র কয়েক মাস। বছরের বাকিটা সময় শ্রমিক–কর্মচারীদের তেমন কোনো কাজ থাকে না। এজন্য মিল লোকশান করতে হয়।
চুয়াডাঙ্গার বৃহত্তম চিনি কলের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু চিনি না করে এর সাথে অন্যান্য পণ উৎপাদন করতে হবে। যেমন কেরু চিনির পাশাপাশি মদ এবং অন্যান্য পণ্য উপজাত হিসেবে উৎপাদন করছে। এতে তাদের বছরে শতাধিক কোটি টাকা লাভবান হচ্ছে। আমাদেরও এমন কিছু চিন্তা নিতে হবে। তাহলে মিলটি চালু করা সম্ভব।’
শামসুল আলম/শায়লা/দীপ্ত নিউজ