সিরাজগঞ্জে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও সম্পত্তি গোপন করার অভিযোগে এক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের নাম সাইফুল ইসলাম (৪৬)। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার ২নং গাঁড়দহ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। সাইফুল ইসলাম উপজেলার গাঁড়দহ ইউনিয়নের মশিপুর গ্রামের শাহাদত হোসেনের ছেলে।
বুধবার (২০ মার্চ) দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।
দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. খাইরুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ২০২৩ সালে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় দুদক।
আরও পড়ুন: ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ
মামলার নথিতে দেখা যায়, চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ২ কোটি ৫৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৪৮৪ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে। কিন্তু দূর্নীতি দমন কমিশন তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই অনুসন্ধান করলে স্থাবর, অস্থাবর ও পারিবারিক ব্যয় হিসেবে সর্বমোট ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৪৩ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। আলোচ্য সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহনযোগ্য আয় পাওয়া যায় মোট ১ কোটি ৬০ লক্ষ ২২ হাজার ৬৭৯ টাকা। সুতারাং চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৬৪ টাকা মূল্যেরর জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ন সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দূর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এছাড়াও দূর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩ কোটি ২০ লক্ষ ৭ হাজার ৮৫৯ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন পূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২ (২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অপরদিকে তার স্ত্রী মোছা. জোমেলা খাতুন (৪১), তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর সম্পদ ও অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে ১ কোটি ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ২১৯ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করে। কিন্তু দূর্নীতি দমন কমিশন তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী যাচাই অনুসন্ধান করলে স্থাবর, অস্থাবর হিসেবে সর্বমোট ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ৫৭ হাজার ১৮ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। দূর্নীত দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩৪ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৯৯ টাকা মূল্যের সম্পদ তথ্য গোপন পূর্বক মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও ১ কোটি ২৪ লক্ষ ৬০ হাজার ৯১৪ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীত দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এদিকে আসামী সাইফুল ইসলাম ঘুষ ও দূর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দ্বারা তার স্ত্রী মোছাঃ জোমেলা খাতুনকে অসাধু উপায়ে উক্ত সম্পাদাদি অর্জনের প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে যা দন্ডবিধি ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়টি অনুসন্ধান শেষে দুদকের পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. মনোয়ার হোসেন বাদি হয়ে ২ নং গাঁড়দহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোছা. জোমেলা খাতুনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপরে দুদুকের উপপরিচালক মো. খাইরুলর হক বলেন, সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে।
শিশির/ সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ