অপহরণের ৬ দিনে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের বুড়িয়া গ্রামের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তৃষ্ণা মণ্ডল, অপহরণের ৪৭ দিনেও একই উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ডুমুরপোতা গ্রামের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী পুজা রানী সরদার ও অপহরণের ৮০ দিনেও তালা উপজেলার আটারুই গ্রামের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমিত্রা রানী মজুমদারকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
অভিযোগ,অপহরণকারিদের নাম উল্লেখ করে দিনমজুর স্বপন মজুমদার তালা থানায় এজাহার দিলেও সাধারণ ডায়েরী করে সুমিত্রাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার উপপরিদর্শক অশোক কুমার পাল।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২ মে বিকেল ৬টার দিকে আফতাবউদ্দিন কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বুড়িয়া গ্রামের সরজিৎ মণ্ডলের মেয়ে তৃষ্ণা রানী মণ্ডলকে (১৫) রাস্তা ঘাটে উত্যক্ত করতো একই গ্রামের খোকন সরদারের ছেলে বখাটে নাঈম সরদার (২৪)। বিষয়টি সরজিৎ মণ্ডল নাঈমের বাবা ও স্বজনদের জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। এরই একপর্যায়ে গত ২ মে মঙ্গলবার বিকেল ৬টার দিকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকাকালিন অবস্থায় নাঈম তার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে মটর সাইকেলে এসে তৃষ্ণাকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় মেয়ের চিৎকারে প্রতিবেশিরা তাদেরকে ধরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ ঘটনায় সরজিৎ মণ্ডল বাদি হয়ে ৪ মে আশাশুনি থানায় নাঈম, তার বাবা খোকন সরদারসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরদিন পুলিশ ধ্রব মাঝিকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি তৃষ্ণা রানী মণ্ডলের। গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি নাঈম সরদারের।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক মহিতুর রহমান জানান, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৃষ্ণাকে উদ্ধার ও নাঈমসহ চারজন আসামীকে ধরার ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
অপরদিকে আশাশুনির খাজরা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী ও ডুমুরপোতা গ্রামের হিমাদ্রী সরদারের মেয়ে পুজা রানী সরদারকে(১৩) গত ২১ মার্চ সকাল সাতটার দিকে দেবব্রত মাষ্টারের কাছে পড়তে যাওয়ার সময় পিরোজপুর সার্বজনীন কালিমন্দিরের সামনের রাস্তা থেকে মটর সাইকেলে অপহরণ করে একই এলাকার হান্নান শেখের ছেলে নাজমুল শেখ ও তার সহযোগিরা। অপহরণের ৪৭ দিনেও তাকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মহসিন আলী জানান, তিনি পাঁচ দিন আগে মামলার তদন্তভার পেয়েছেন। ভিকটিম উদ্ধার ও আসামী গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সার্বিক চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
অপরদিকে তালা উপজেলার আটারুই গ্রামের স্বপন মজুমদারের মেয়ে এজেএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী সুমিত্রা মজুমদারকে(১৬) একই গ্রামের আব্দুল করিম গাজীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার দিকে এজেএইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে বাঁশতলা রাস্তার উপর থেকে মটর সাইকেলে অপহরণ করে। এ ঘটনায় তার বাবা রাকিবুল ইসলাম ও তার বাবা আব্দুল করিম গাজীর নাম উল্লেখ করে ২১ ফেব্রুয়ারী থানায় এজাহার দায়ের করেন। অপহরণের ৮০ দিনেও উদ্ধার হয়নি ভিকটিম, গ্রেপ্তার হয়নি আসামী রাকিবুল ও করিম গাজী। অথচ গত বৃহষ্পতিবার রাতে রাকিবুল ও তার বাবা করিম গাজী বাড়িতে এসে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ধরছে না বলে অভিযোগ অপহৃত সুমিত্রা রানী মজুমদারের মা মায়া রানী মজুমদারের।
তবে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তালা থানার উপপরিদর্শক অশোক কুমার পাল জানান, মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে মর্মে তার বাবা স্বপন থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছিলো। তাই মেয়েকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গেড় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আল/দীপ্ত সংবাদ