রাজধানীর তেজগাঁওয়ে পাঁচ বছরের শিশু রোজা মনির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটি এই নির্মম ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ড্যাবের আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ড্যাব নেতারা বলেন, শুধু গরিব হওয়ার কারণে রোজা মনির মরদেহ একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়েছে—এ ঘটনা একটি মানবিক ব্যর্থতার নিদর্শন। এ ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্রের নীরবতা এবং জনসচেতনতার অভাব গভীর উদ্বেগজনক।
ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তর–এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, “গত ১২ মে সকালে রোজা মনি তার বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। পরদিন ১৩ মে বিজয় সরণি ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার স্তূপে একটি বস্তা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরিবার, এলাকাবাসী ও চিকিৎসক সমাজ শোকাহত। “আমরা এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার দাবি করছি।”
তিনি আরও বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড দেশের মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের প্রতীক। আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র চাই, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক নিরাপদে বাঁচতে পারবে এবং ন্যায্য বিচার পাবে।”
ড্যাব ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ডা. মো. মুজিবুর রহমান বলেন, “হতদরিদ্র পরিবারের এই শিশুর মরদেহ হাসপাতাল থেকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে না পাঠিয়ে স্বজনরা একটি সিএনজিতে করে বাসায় নেয়। এটি একটি লজ্জাজনক চিত্র। একটি উন্নয়নশীল দেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা এতটা ভঙ্গুর হতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, নিহত শিশুর পরিবার ঢাকায় আসার আগে নরসিংদীর রায়পুরায় বসবাস করত। শিশুটির মা গৃহকর্মী, বড় বোনরা পোশাক কারখানায় কাজ করেন। গরমে কষ্ট পেয়ে রোজা মনি ঘর থেকে বাইরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন পাওয়া যায় তার বস্তাবন্দি মরদেহ। তার গলায় ছিল নাইলনের দড়ি, আর শরীরে ছিল গরম তরলের চিহ্ন।
ড্যাব নেতারা বলেন, একটি শিশুর মরদেহ গুম ও হত্যার ঘটনায় যদি রাষ্ট্র, হাসপাতাল, গণমাধ্যম, সমাজ সবাই নীরব থাকে, তাহলে তা শুধু শিশুটির প্রতি নয়—সমগ্র মানবতার প্রতি অপরাধ। তারা অভিযোগ করেন, শিশুটির মৃত্যু নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হয়নি, সামাজিক প্রতিক্রিয়াও ছিল অত্যন্ত কম।
ড্যাব নেতারা দাবি করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের রূপরেখায় স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে যে দিকনির্দেশনা রয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে এমন মানবিক বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব।
তারা ২৫ ও ২৬ দফা উল্লেখ করে বলেন—‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’, ‘বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু নয়’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে জনবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ার কথা বলা হয়েছে।