শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ জারি করা বদলি আদেশ কার্যকর করেনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। অধিদপ্তরের ইতিহাসে এই ঘটনা নজিরবিহীন বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৬ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ উপসচিব মনিরা হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি এবং ২ জনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু আদেশ জারির প্রায় ২ সপ্তাহ পার হলেও দুজন নির্বাহী প্রকৌশলী এখনো যোগদান করেননি। এমনকি একজন যোগদানপত্র জমা দিলেও তা গৃহীত হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলীর (রুটিন দায়িত্ব) দায়িত্বে থাকা আলতাফ হোসেনের সময় বদলি আদেশটি জারি হয়।
তবে আদেশ জারির দু’দিন আগে ১৪ অক্টোবর, প্রধান প্রকৌশলী পদে পরিবর্তন এনে রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. তারেক আনোয়ার জাহেদীকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদোন্নতি করা হয়। একইসঙ্গে প্রধান প্রকৌশলীর (রুটিন দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৬ অক্টোবর জারি হওয়া আদেশ অনুযায়ী যশোর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাদিউজ্জামানকে প্রধান কার্যালয়ে, মুন্সিগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মৌরিন আক্তার মৌকে প্রধান কার্যালয়ে এবং মেহেরপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল আহসানকে যশোর জেলায় বদলি করা হয়। এছাড়াও শরীয়তপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেল মিয়াকে মুন্সিগঞ্জ জেলা এবং কুষ্টিয়া জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানভীর ইসলামকে মেহেরপুর জেলা অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ঐ আদেশ অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জ জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মৌরিন আক্তার মৌ প্রধান কার্যালয়ে যোগদান করেছেন। তবে যশোর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাদিউজ্জামান প্রধান কার্যালয়ে যোগ দেননি। ফলে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা থাকা মেহেরপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল আহসান যশোর যোগদান করতে পারেননি।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল আহসান বলেন, “১৬ অক্টোবর বদলির আদেশ জারি হলেও এখন পর্যন্ত আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি। আমি তা খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নিকট দাখিল করেছি, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনো গৃহীত হয়নি।”
অন্যদিকে, যশোর জেলা থেকে বদলি হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাদিউজ্জামান ইতিমধ্যেই বিদায় নিয়েছেন বলে জানা গেলেও অভিযোগ রয়েছে, তিনি এখনও অফিসের রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
বিষয়টি নিয়ে মো. হাদিউজ্জামান–এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে পরে কথা বলব।” তবে পরবর্তীতে তিনি আর যোগাযোগ করেননি।
এছাড়া, খুলনা সার্কেল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলরাম কুমার মণ্ডলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আর শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) মো. তারেক আনোয়ার জাহেদীর সঙ্গে ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইইডি অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বদলি ক্ষেত্রে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তারা ৫ আগস্ট আগেও বদলি–বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের পছন্দের বাইরে কোনো বদলি হলে তারা নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ অক্টোবর সাম্প্রতিক বদলি আদেশও এই সিন্ডিকেটের অনুকূলে না থাকায় তা কার্যকরে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
মাসউদ/এসএ