উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে ব্র্যাক।
মঙ্গলবার (২৯শে জুলাই) রাজধানী ব্র্যাক সেন্টারে প্রকল্পের যাত্রা শুরু উপলক্ষে কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
প্রকল্পটি আগামী তিন বছর সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, বাগেরহাট জেলার মংলা এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপকূলীয় উপজেলায় ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য নিরপাদ পানির প্রাপ্যতা এবং জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।
ড্যানিশ মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স– এর সহায়তায় ব্র্যাক পরিচালিত ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার।
তিনি বলেন, ডেনমার্কের সহায়তায় ব্র্যাক পরিচালিত ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি সকলকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রকৃতি নির্ভর সামগ্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এটি কেবল মানুষের জন্যই নয়, ফসল, গবাদিপশু এবং সামগ্রিক পরিবেশের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এই উদ্যোগটি টেকসই উন্নয়নের প্রতি ডেনিশ সরকারের দীর্ঘদিন অঙ্গীকারের প্রতিফলন। জলবায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের নেতৃত্বের স্বীকৃতি এর মূল ভিত্তি।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।
তিনি বলেন, ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পটি নিরাপদ পানি এবং খাদ্য নিরাপত্তা– এই দুটি বিষয়কে একসাথে মোকাবিলা করছে, কারণ জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে এই দুইয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যদিও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে এটি সমস্যা সমাধানের একটি অংশমাত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজন সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি।
আসিফ সালেহ্ বলেন, “জলবায়ুর হুমকির মুখে মানুষ বসে থাকে না, তারা নিজেদের মতো করে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে এবং বাঁচার পথ খুঁজে বের করছে। একটু সহায়তা পেলে আমাদের কৃষক ও সাধারণ মানুষ নিজেরাই নিজেদের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।”
এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা বিভাগ সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম।
পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, জলবায়ু সংকট সমাধানের তাৎক্ষণিক কোনো উপায় নেই বলে আমাদের অভিযোজনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় ‘রেইন ফর লাইফ’–এর মতো উদ্যোগগুলো আরো বড় পরিসরে প্রয়োগের বিষয়টিকে সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে।
জলবায়ু মন্ত্রণালয় সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা একটি মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত।
ব্র্যাক পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই সাফল্যগুলো আরো বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন।
‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি প্রধান আবু সাদাত মনিরুজ্জান খান।
ড. মো. লিয়াকত আলী বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৭২ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ পানীয় জলের আওতায় আনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় দীর্ঘমেয়াদি পানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পানিসম্পদ, কৃষি ও প্রকৃতি–ভিত্তিক পদ্ধতির সমন্বয়ে একটি সমন্বিত সমাধানের প্রয়োজন, যা ‘রেইন ফর লাইফ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘রেইন ফর লাইফ’ বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পে পরিবার ও কমিউনিটি পর্যায়ে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ, জলাশয়ের পানি পরিশোধন এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এছাড়াও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্র্যাকের ‘অ্যাডাপটেশন ক্লিনিক’ মডেলের মাধ্যমে বিশেষ করে নারীদের নেতৃত্বে প্রান্তিক কৃষকদের জলবায়ু সহনশীল প্রযুক্তি ও পরামর্শ দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং উপকূলীয় এলাকার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
এসএ