চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ–যুবলীগের হামলার প্রতিবাদে ও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আ.লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিও জানান।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মশাল মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে আবার রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হামলা–গুলি করেছে। তাদের নিষিদ্ধ না করলে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের টিকে থাকাই অনিশ্চিত হয়ে যাবে।‘
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ছাত্রলীগকে গ্রেপ্তার ও সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করার জন্য যদি আড়াই মাস পরে রাজপথে নেমে আসতে হয় তাহলে আপনাদের কাজ কী? ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ না করলে আহত ও শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি করবেন আপনারা। ছাত্রলীগ বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক কিনা, তা ১৫ জুলাই হামলার পর নির্ধারণ হয়ে গেছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগের পুনর্বাসন এই বাংলায় হবে না।
তিনি বলেন, চুপ্পু সাহেবকে বলতে চাই এখনো সময় আছে বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ দেখুন। আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সংবিধান মানি না। হাসিনাকে এ দেশে আসতে হবে, বিচারের মুখোমুখি করা হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পুনর্বাসন নয় বিচার হবে, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে।
প্রশাসন ও মিডিয়াকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, আপনারা যদি মনে করেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাথে আঁতাত করবেন তাহলে ভুল ভাবছেন। ছাত্র–জনতা হাসিনার বিকল্প বেছে নিয়েছে, আপনাদের বিকল্পও বাছাই করতে দ্বিধা করবে না। আপনারা সরকারকে সহযোগিতা করুন। অনেক মিডিয়া যারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের শ্রুতি বন্দনা করে তার হাতকে শক্তিশালী করেছে সেই ফ্যাসিস্ট মিডিয়া আবার মাথাচাঁড়া দিয়েছে। কলাম লিখতে শুরু করেছে। সেই শ্রুতি বন্দনা আর কলাম ৫ আগস্ট শেষ হয়ে গেছে।
সমাবেশে সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, এই মুজিববাদ যেখানে প্রবেশ করেছে সেই জায়গাকে পচিয়ে বের হয়েছে। এই মুজিববাদ ৭২’ এর সংবিধানকে কলুষিত করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ফ্যাসিস্টদের দালালরা এই দেশে থাকতে পারবে না। শেখ হাসিনার বিচার এই বাংলার জমিনে হবে। এই ছাত্র–জনতার আকাঙ্ক্ষা একটা নতুন সংবিধান, একটি নতুন বাংলাদেশ।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা ২৪’ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের কবর দিলেও এখনও তাদের মূলোৎপাটন করতে পারিনি। এই বাংলার মাটিতে এখনও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। মো. সাহাবুদ্দিন, যিনি স্বৈরাচারের দোসর ছিলেন আমরা তার পদত্যাগের দাবি জানাই।
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সানজিদা আফিয়া অদিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, হাসিব আল ইসলাম, আব্দুল হান্নান মাসুদ, আব্দুল কাদের, হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য দেন।
মিছিল চলাকালীন আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন—‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জেলে ভর’; ‘আমার ভাই কবর, খুনি কেন ভারতে’; ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে’; ‘ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছাড়’; ‘স্বৈরাচারের দোসর, হুঁশিয়ার সাবধান’; ‘মুজিববাদ নিপাত যাক, ইনকিলাব জিন্দাবাদ’; ‘ছাত্রলীগ/সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ইত্যাদি।
এসএ