দীর্ঘদিন ধরে রক্তাক্ত সংঘাতে জর্জরিত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন প্রস্তাব দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। মিশরের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ টিভি এক বিশেষ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কায়রো ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেয়েছে এবং সেটি ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সংগঠনটির প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় রয়েছে মধ্যস্থতাকারী পক্ষ।
অবশ্য এর আগে হামাস যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল, যেখানে তাদের নিরস্ত্রীকরণের শর্ত ছিল। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের দেয়া প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়।
আল জাজিরাকে দেয়া এক বিবৃতিতে হামাসের শীর্ষ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেন, ‘নেতানিয়াহু মূলত যুদ্ধবিরতির নামে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছেন। এটি কোনো রাজনৈতিক চুক্তি নয়, বরং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধকে ধ্বংসের একটি চক্রান্ত।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অস্ত্রের সঙ্গে আমাদের সম্মান ও আত্মনিয়ন্ত্রণ জড়িত। নেতানিয়াহু জানেন যে এটি একেবারেই অযৌক্তিক শর্ত। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে ভণ্ডুল করতেই তিনি এ ধরনের দাবি সামনে এনেছেন।‘
নতুন প্রস্তাবের বিষয়েও একই ধরনের শর্ত থাকায় আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলের এই প্রস্তাব এমন এক সময় এসেছে যখন গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। গাজার হামাস–নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৫১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ জন ছাড়িয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলো বারবার গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে। সেখানে পানির অভাব, খাদ্য সংকট, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ও ওষুধের সংকটের কারণে বহু মানুষ অনাহারে, চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করছেন।
মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিশরের পাশাপাশি কাতার ও জাতিসংঘও সক্রিয় রয়েছে। সূত্রমতে, প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তুতে যদি কোনো নমনীয়তা আনা যায়, তাহলে পরবর্তী দফার আলোচনা কায়রোতেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে হামাসের অস্ত্র সমর্পণের মতো ‘অবাস্তব’ শর্ত থাকলে কোনো আলোচনাই ফলপ্রসূ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।