বিজ্ঞাপন
রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫
রবিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৫

মাঠ–পার্ক দখল নিয়ে উদ্বেগ, আইন সংশোধনের দাবি

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

আইন ও আদালতের নির্দেশনা স্বত্বেও গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ বিভাগের উদাসীনতায় নগরের মাঠ, পার্কগুলো বিভিন্ন ক্লাবের নামে দখল করে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

ক্লাবগুলো সুকৌশলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তদের ব্যবহার করে প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করে মাঠ, পার্ক দখল করেছে। মাঠ, পার্ক দখল উদ্ধারে আদালত একাধিকবার নির্দেশনা দিলেও রাজউক ও সিটি কর্পোরেশন অগ্রায্য করে শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক মতো আরো মাঠ পার্ক ক্লাবকে অপারেটর নিয়োগের নামে ইজারা বা হস্তান্তর করেছে। মাঠ, পার্ক আইন এবং পরিবেশ আইন সংশোধন না করা হলে সরকারী সংস্থা এবং ক্লাবের বেআইনী কাজ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে মাঠ, পার্ক জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলনের ব্যানারে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

সভায় পরিবেশবাদী ব্যাক্তিত্ব ও পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা মু. হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনপবা’র সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সম্পাদক আইনজীবী ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জনস্বাস্থ্য ও নীতি বিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনএর সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব, সৈয়দ ইসতিয়াক আহমেদ, সংগঠক, সেভ ধানমন্ডি প্লেগ্রাউন্ডস, তেঁতুলতলা মাঠ বাঁচাও আন্দোলনএর প্রধান সমন্বয়ক সৈয়দা রতনা, সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ।

বক্তারা বলেন, সারাদেশে নানাভাবে সরকারি খেলার মাঠপার্ক দখলের হিড়িক চলছে। ধানমন্ডি মাঠ এক সময় উম্মুক্ত এ মাঠটি একটি ক্লাব দখল করে নেয়। মাঠটি সবার জন্য উম্মুক্ত রাখার কথা বলা হলেও, এক সময় পুরো মাঠে ক্লাবটি নানা স্থাপনা তৈরি করে। ফলশ্রুতিতে শুধু ক্লাবের সদস্যদের প্রশিক্ষনের জন্য মাঠটি সংরক্ষিত হয়ে যায়। জনগণের টাকায় তৈরি মাঠটি ক্লাবের দখলে চলে যায় এবং ক্লাবটি লক্ষ টাকায় শেয়ার বিক্রি করে কোটিপতি হয়ে উঠে। এই ক্লাব পরিবেশবাদীদের নামে মিথ্যা মামলা দেয় এবং পরিবেশবাদীদের ফলশ্রুতিতে গ্রেফতার করা হয়। মাঠটি এখনো দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়াধীনে আছে। কিছুদিন আগে গণপূর্ত নিজস্ব সাইনবোর্ড স্থাপন করলেও গোপনে তা খুলে ফেলা হয়েছে।

এসময় বক্তারা আরও বলেন, অন্যদিকে গুলশানে শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক ৮ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ছিল। এ মাঠ ও পার্কটি গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ধ্বংস করে কিছু লোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রুপান্তর করেছে। বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য রাখা উম্মুক্ত স্থানটি তারা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে, ফুটবলের টার্ফ বানিয়েছে। ঘণ্টা প্রতি সেই টার্ফ কয়েক হাজার টাকায় ভাড়াও দিচ্ছে। পার্কের ঘাসে ঢাকা সবুজ চত্ত্বর তারা ধ্বংস করে পার্কটিকে নিজেদের দখলে নিয়েছে। মাঠ ও পার্কের সকল প্রবেশ পথে নিজেদের নিরাপত্তা প্রহরী বসিয়ে জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এভাবে পার্ক ও মাঠ দখল করে ইচ্ছামত স্থাপনা তৈরিসহ বেআইনিভাবে এর প্রকৃতি ও শ্রেণী পরিবর্তন করে ভাড়া বা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে বানিজ্যিক কাজে ব্যবহার সুস্পষ্টভাবে আইন পরিপন্থী। এই পার্ক ও মাঠ নিয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ০৩ টি মামলা দায়ের এবং নিস্পত্তি হয়। যার ০৩ টিতেই মহামান্য আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ রাজউককে দখল উচ্ছেদের এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে কোনভাবে লিজ বা দখল দেওয়া বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি, কোনো এক অদৃশ্য কারণে রাজউক ও ডিএনসিসি আদালতের আদেশ লঙ্ঘন ও অবমাননা করে চলেছে।

বক্তারা আরও বলেন, নিজস্ব পরিদর্শনে চুক্তির শর্তভঙ্গের প্রমাণ এবং আদালতের নির্দেশের পর নিজেরাই ইমারত ভেঙ্গে ফেলার ও ইয়ুথ ক্লাবের কাছ থেকে পার্কটি হস্তগত করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজউক। পাশাপাশি ডিএনসিসির সঙ্গেও চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গত ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে রাজউকের সাধারণ সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্তও হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন হয়নি! উল্টো ক্লাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জুলাই ২০২৫ ৮ম সভায় চুক্তিটি পুনর্বহাল করেছে ডিএনসিসি!

সভায় আগামী দিনগুলোতে মাঠপার্কের দখলদারদের নাম, পরিচয়সহ তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ, কোন কোন সরকারিবেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কর্মকর্তা মাঠপার্ক দখলে ও বাণিজ্যিকীকরণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের তালিকা তৈরি ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা; একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা, মাননীয় উপদেষ্টাগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মাঠ ও পার্ক বেহাত করা কুশীলবদের বিষয়ে অবগতকরণ এবং তাদেরকে মাঠপার্কগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ জানানো, পার্কমাঠ ইজারা দিয়ে এবং অনিয়মের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান ও জালিয়াতি করা কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিলের পরিকল্পনা কথা সভায় জানানো হয়।

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More