মাগুরার বহুল আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আগামী শনিবার (১৮ মে) দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। অভিযোগ গঠনের মাত্র ২১ দিনের মধ্যে বিচার কার্যক্রম শেষ হওয়ায় মামলাটি দৃষ্টান্তমূলকভাবে দ্রুত নিষ্পত্তির পথে এগোচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ তথ্য নিশ্চিত করেন মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে যুক্তিতর্কের দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এতে অংশ নেন। এ সময় মামলার চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
জনগুরুত্বপূর্ণ মামলাটি পরিচালনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাসম্পন্ন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী নিযুক্ত হন।
তিনি শুনানিতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, মেডিকেল রিপোর্ট ও সাক্ষ্য–প্রমাণে তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করছি, আদালত সর্বোচ্চ শাস্তির রায় দেবেন, যাতে এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।‘
রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটিতে মোট ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত আসামিদের ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় জেরা করে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন।
মামলার বিচার কার্যক্রম গত ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে শুরু হয়। এর আগে ১৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। ২৭ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় এবং তা টানা শুনানির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
মামলায় চারজনকে বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। শিশুটির বড় বোনের শ্বশুরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অভিযোগ), বোনের স্বামী ও ভাশুরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারায় (ভয়ভীতি প্রদর্শন), এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়।
মামলার মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি গত ১৫ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ৬ মার্চ সকালে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন তিনি। ওইদিনই শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ১৩ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
শিশুটির মা ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।