১ মে মহান মে দিবস, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ১৩৮ বছর আগে ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রেড ইউনিয়নগুলো দিনে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে এক বিরাট প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু করে। ব্রিটিশ সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েনের ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি পূরণে স্লোগান ঠিক করেন, ‘আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিনোদন এবং আট ঘণ্টা বিশ্রাম‘।
সে বছর সবচেয়ে বড় আন্দোলনটা হয় পহেলা মে শিকাগোতে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক সমবেত হন। তখন কারখানায় কোন নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা বা বিশ্রাম ছাড়াই টানা কাজ করে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। এই আন্দোলনকে ব্যবসায়ী ও রাজনীতি মহল পছন্দ না করলেও, ক্ষুব্ধ শ্রমিক ও আন্দোলনকারী এতে উত্তেজিত হতে থাকেন। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদর মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দেয় যাতে একজন মারা যায় ও অনেকে আহত হয়।
পুলিশি নিষ্ঠুরতায় ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত বিক্ষোভকারী এবং শ্রমিক নেতারা পরদিন ৪ মে শিকাগোর বিখ্যাত হেমার্কেট স্কয়ারে কর্মসূচির ডাক দেয়। এ সময় আজও পরিচয় জানতে না পারা এক ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়েন।
ওই বিস্ফোরণের ফলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, সাতজন পুলিশ সদস্য নিহত হয় এবং ৬৭ জন কর্মকর্তা আহত হয়। চারজন বিক্ষোভকারীও নিহত হয় এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়।
পরে এই ঘটনা পরিচিতি পায় হে মার্কেট ম্যাসাকার হিসেবে। পরবর্তীতে আট জন নৈরাজ্যবাদী খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন এবং তাদের দোষ ঠিকভাবে প্রমাণের আগেই তাদের অনেককে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এই ঘটনাগুলোর স্মরণে, ১৮৮৯ সালে ২০ দেশের সমাজকর্মী, শ্রমিক নেতা ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর এক আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে পহেলা মে তারিখ ‘মে দিবস‘ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
অন্যান্য দেশও যেভাবে মে দিবস পালনে যোগ দেয়
শিকাগোর এই সংঘাত পরবর্তী কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন বামপন্থী দলগুলোর জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করতে থাকে। দক্ষিণ ইউরোপে প্রথম মে দিবস পালনে এগিয়ে আসে স্লোভেনিয়ান এবং ক্রোয়াটরা, যারা সেসময় অস্ট্রো–হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কাজের নিচু পরিবেশ, অল্প বেতন এবং দীর্ঘ কর্মঘণ্টার প্রতিবাদে ১৮৯৩ সালে সার্বিয়ার শ্রমিকরা এক মে দিবস র্যালি বের করে।
জার্মানিতে ১৯৩৩ সালে নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিক দিবসের দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়।
পূর্ব এবং পশ্চিম
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয়ের পর বৈশ্বিক মানচিত্র বদলে যায়। বিশ্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভক্তি বেশি করে চোখে পড়তে থাকে।
বিভিন্ন সমাজতান্ত্রিক দেশ যেমন কিউবা, সে সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনে বছরের পর শ্রমিক দিবস পালিত হয়ে এসেছে এবং এ দিনের ছুটিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হয়।
সাধারণত এদিন বিরাট সমাবেশের আয়োজন করা হত, যেমনটা মস্কোর রেড স্কয়ারে দেখা যেত। সেই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিরা যোগ দিতেন। এদিন একইসাথে সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর শক্তিমত্তাও প্রদর্শন করা হত।
সমাজতান্ত্রিক নেতারা বিশ্বাস করতেন এই নতুন ঘোষিত ছুটি ও উৎসব ইউরোপ এবং আমেরিকার শ্রমিক শ্রেণীকেও উদ্বুদ্ধ করবে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াইয়ে। সমাজতান্ত্রিক ফেডারেল রিপাবলিক অফ যুগোশ্লাভিয়ার গল্পটাও ছিল একই রকম।
সেখানে ১৯৪৫ সাল থেকে মে দিবসের দিন সরকারি ছুটি পালিত হয়ে আসছে। দিনটি উদযাপনে মিছিল ও সামরিক র্যালি অনুষ্ঠিত হয় এবং একইসাথে রাষ্ট্রীয় প্রচারণার জন্য বেছে নেয়া হয় দিনটিকে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে শ্রমিক ও ইউনিয়নগুলি আরও ভালো কাজের পরিবেশের দাবিতে মে দিবস ঘিরে র্যালি ও সমাবেশ করে।
এবার মে দিবস
এবার মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক–মালিক গড়বো দেশ, স্মার্ট হবে বাংলাদেশ’। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব শ্রমজীবী মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ