আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ভারতে পৌঁছেছেন। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এই প্রথম কোনো উচ্চপর্যায়ের তালেবান নেতা ভারত সফরে গেলেন। যা কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ তার ওপর থেকে সাময়িকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় এই সফর সম্ভব হয়েছে। এমন এক সময় এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন ভারত তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে। ফলে ঘটনাটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পাকিস্তান।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রন্ধীর জয়সওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাই এবং তার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা আশা করছি।
এ সফরে মুত্তাকি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি দুবাইয়ে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। যদিও এবারের বৈঠকের আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা প্রকাশ করা হয়নি, বিশ্লেষকদের মতে—বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
আন্তর্জাতিক সংকট গোষ্ঠীর (আইসিজি) বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি বলেন, নয়াদিল্লি চায় কাবুলে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে, যাতে তারা চীন ও পাকিস্তানের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছিয়ে না পড়ে।
তবে ভারত এখনই তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আফগানিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত রাকেশ সূদের মতে, ভারত তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে কোনো তাড়াহুড়া করছে না।
২০২৩ সালে নয়াদিল্লিতে আফগানিস্তানের দূতাবাস বন্ধ হয়ে গেলেও মুম্বাই ও হায়দরাবাদের কনস্যুলেট সীমিত আকারে চালু আছে। ভারত জানিয়েছে, কাবুলে তাদের উপস্থিতি এখন মূলত মানবিক সহায়তা সমন্বয়ের কাজেই সীমিত।
এর আগে মুত্তাকি রাশিয়া সফর করেছিলেন। এখন পর্যন্ত একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে।
তালেবানের কঠোর ইসলামি শাসন ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারের সঙ্গে আদর্শগতভাবে ভিন্ন। তবুও নয়াদিল্লি কূটনৈতিক বাস্তবতায় এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে চায়। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে ভারত–পাকিস্তান বৈরিতায় প্রভাবিত; এবার সেই প্রেক্ষাপটে কাবুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে ইসলামাবাদ–কাবুল সম্পর্কে নতুন ফাটল তৈরি করার সুযোগ দেখছে ভারত।
দোন্থির মনে করেন, কাবুল এখন ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে। ভারতও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়েই সম্পর্ক থেকে সর্বাধিক লাভ তুলতে চায়।
পাকিস্তানি বিশ্লেষক ওয়াহেদ ফাকিরি বলেন, তালেবান ও পাকিস্তানের সম্পর্ক এখন উত্তেজনাপূর্ণ। সেই সময় মুত্তাকির ভারত সফর একটি উল্লেখযোগ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
ইসলামাবাদ বরাবর অভিযোগ করে আসছে, আফগানিস্তান তার ভূখণ্ড ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালানো সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও কাবুল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে চলতি বছরের মে মাসে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে দশকের অন্যতম ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত করে তোলে।