মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫
মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৫

বেগম খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া একটি নাম নয়, বরং একটি প্রতিষ্ঠান। সাধারণ এক গৃহবধূ থেকে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির কাণ্ডারি হিসেবে তিনি ইতিহাসে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। তার প্রয়াণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি প্রদীপ্ত অধ্যায়ের অবসান হলো।

রাজনীতিতে অভিষেক ও প্রতিকূলতা জয়:
১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের পর বিএনপি যখন ভাঙনের মুখে, তখন দলের নেতাকর্মীদের প্রবল চাপে ১৯৮২ সালের ২রা জানুয়ারি রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। ১৯৮৩ সালে দলের ভাইসচেয়ারম্যান এবং ১৯৮৪ সালের ১০ই মে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি। সেই থেকে মৃত্যু অবধি তিনি এই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন।

এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও আপোষহীনখেতাব:
১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈরাচার জেনারেল এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে অকুতোভয় নেতৃত্বের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে আপোষহীন নেত্রীহিসেবে পরিচিতি পান। এই দীর্ঘ আন্দোলনে তিনি বারবার গৃহবন্দি ও গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু সামরিক সরকারের সাথে কোনো আপস করেননি।

দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী:
১৯৯১ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ২০শে মার্চ ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

রাজনৈতিক অর্জনের সময়রেখা:
১৯৯১১৯৯৬: প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন। এ সময় তার সরকারের বড় অর্জন ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থা থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন।

১৯৯৬: ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর অল্প সময়ের জন্য দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন এবং সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

২০০১২০০৬: চার দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিয়ে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভ করেন এবং তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচি:
খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, মেয়েদের জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু এবং বয়স্ক ভাতার মতো জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া যমুনা বহুমুখী সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) উদ্বোধনের মতো বড় অবকাঠামো উন্নয়নও তার সময়ের অর্জন।

সংগ্রাম ও কারাজীবন:
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি এক বছরের বেশি সময় সাবজেলে বন্দি ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তাকে পুনরায় কারাগারে যেতে হয়। দীর্ঘ কারাবাস ও অসুস্থতার পরও তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি নির্বাহী আদেশে পূর্ণ মুক্তি লাভ করেন।

সংসদীয় রাজনীতির আইকন:
খালেদা জিয়া সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ডধারী। তিনি যতবার সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, কখনোই কোনো আসনে পরাজিত হননি। এমনকি ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পাঁচটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবকটিতেই জয়ী হওয়ার বিরল কৃতিত্ব তার রয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তান—তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর জননী খালেদা জিয়া জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতার সাথে লড়াই করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার অবদান, বিশেষ করে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই এবং ক্ষমতায় থাকাকালীন উন্নয়ন কর্মসূচি তাকে এ দেশের মানুষের হৃদয়ে চিরকাল অমর করে রাখবে।

আরও পড়ুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More