বর্ষাকাল এলেই বাড়ে বিষধর সাপের উপদ্রব। এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। অনেক সময় শিশুরাও বাইরে খেলতে গিয়ে সাপের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। আগে জানা জরুরি কামড়ালে প্রথমে কি করতে হবে। এছাড়া সাপে কামড়ের লক্ষণগুলো কী কী।
সাপে কামড়ের চিহ্ন কীভাবে সনাক্ত করতে হয় এবং শনাক্তের পর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগে প্রাথমিক চিকিৎসা কীভাবে করা উচিত তাও জানা প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশিয়ায় কয়েক শতাধিক প্রজাতির সাপ রয়েছে, এর মধ্যে ৪টি সবচেয়ে মারাত্মক। এগুলো হলো, সাধারণ কোবরা, স’–স্কেলড ভাইপার, সাধারণ ক্রেইট এবং রাসেলস ভাইপার। বিষাক্ত সাপের উপরের অংশটি ত্রিভুজাকার হয়, অন্য দিকে, যে সব সাপের বিষ নেই সেটি স্বাভাবিক থাকে।
সাপে কাটলে কি করবেন?
বাংলাদেশে বিষধর সাপের কামড়ে মৃত্যুর অন্যতম কারণ সচেতনতার অভাব, সঠিক চিকিৎসার অভাব বা চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হওয়া। এখনও অনেকেই জানেন না যে সাপে কাটলে তাৎক্ষণিকভাবে কি কি করতে হবে।
চলুন জেনে নিই সাপে কাটলে কী করবেন আর কী করবেন না।
১. সর্বপ্রথম সাপে কাটা ব্যক্তিকে আতঙ্কগ্রস্ত হতে দেওয়া যাবে না। তাকে বার বার সাহস যোগাতে হবে। নির্বিষ সাপের কামড়েও আতঙ্কিত হয়ে মানসিক আঘাতে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আর তাই সাপে কামড়ালেই মৃত্যু হবে এমনটি নয় এসব বলে রোগীকে আতঙ্ক থেকে দূরে রাখা যেতে পারে।
২. রোগীকে বেশি নড়াচড়া করতে দেওয়া উচিৎ না। রোগীকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করুন এবং আক্রান্ত স্থান কম নড়াচড়া করতে দিন।
৩. আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষই সাপে কাটলেই প্রথমে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে ফেলেন। এটা উচিৎ নয়, সাপে কামড় দিলে আক্রান্ত স্থানে শক্ত বাধন বা গিট না দিয়ে ব্যান্ডেজের সাহায্যে একটু চাপ দিয়ে প্যাঁচাতে হবে। একে প্রেসার ইমোবিলাইজেশন বলে। ব্যান্ডেজ না পাওয়া গেলে গামছা, ওড়না বা এ জাতীয় কিছু ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে। শরীরে ঘড়ি বা অলঙ্কার জাতীয় কিছু পড়ে থাকলে খুলে ফেলুন।
৫. রোগীকে কোনভাবেই হাঁটাচলা করতে দেওয়া উচিৎ না। রোগীকে আধশোয়া অবস্থায় রাখুন।
৬. যদি সাপটিকে ইতোমধ্যে মেরেই ফেলেন, তাহলে সেটি হাসপাতালে নিয়ে আসুন। তবে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনোভাবেই হাত দিয়ে ধরা যাবে না। কিছু সাপ মরার ভান করে থাকে। তবে সাপ মারতে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
সাপে কাটলে কি করবেন না
১. অনেকে আছে সাপে কাটলেই প্রথমে শক্ত বাঁধন বা গিট দিয়ে ফেলেন। কিন্তু এমনটি করা যাবে না। হাত বা পায়ে কামড় দিলে, কামড়ানো জায়গা থেকে ওপরের দিকে দড়ি বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়, যাতে বিষ ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। বরং এতে হাত/পায়ে রক্ত প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে রক্ত প্রবাহের অভাবে টিস্যুতে পচন (Necrosis) শুরু হতে পারে।
২. কামড়ানোর স্থানে ব্লেড, ছুরি দিয়ে কাটাকুটি করা যাবে না। অনেকে বিষ বের করার জন্য এমনটি করেন কিন্তু এটিও বিশেষজ্ঞ ছাড়া করা যাবে না।
৩. আক্রান্ত স্থানে মুখ লাগিয়ে চুষে বিষ বের করার চেষ্টা একদম করা উচিৎ না। এমনটি না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। সাপের বিষ রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা এভাবে বের করা সম্ভব নয়। কোনো অবস্থাতেই আক্রান্ত স্থানে মুখ দেয়া উচিৎ না, এতে নিজেরই ক্ষতি হবে।
৪. আক্রান্ত স্থানে ভেষজ ওষুধ, লালা, পাথর, উদ্ভিদের বীজ, গোবর, কাদা ইত্যাদি লাগানো যাবে না। এমনকি কোনো রাসায়নিক পদার্থ লাগানো যাবে না বা তা দিয়ে সেঁক দেওয়াও ঠিক না।
৫. রোগীকে কোন কিছু খাওয়ানো ঠিক না। এমনকি কিছু খাইয়ে বমি করানোর চেষ্টাও করা যাবে আর ব্যাথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধও খাওয়ানো যাবে না।
সুপ্তি/ দীপ্ত সংবাদ