ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলেগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি হামলার চারদিন পর অনেকটা আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান।
যদিও দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। দুই দেশের যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে সামনে এসেছে নতুন এক তথ্য।
‘সিএনএন’–এর উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এই থবর জানায়।
গত ১০ মে শনিবার বিকেলে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে নিজের সামাজিক যোগাযোগ সোশ্যাল ট্রুথে পোস্ট দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি জানিয়েছিলেন, রাতভর আলোচনার পর দুই প্রতিবেশী দেশ তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই ভারত ও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’ দাবি করেছে, ভারত–পাকিস্তান সংঘাত ‘নাটকীয় মোড়’ নিতে পারে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে গোয়েন্দা সূত্রে এমনই তথ্য পায় যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।
কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সিএনএন জানায়, মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি দল যাদের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও ও হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ সুসি ওয়াইলস–ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
সিএনএন বলেছে, তথ্যগুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় এর ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি এসব কর্মকর্তারা।
তবে তারা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের গুরুত্ব অনুধাবন করে জেডি ভ্যান্স নিজেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে টেলিফোন করেন।
হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভ্যান্স তার পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অবহিত করেন।
পরে শুক্রবার দুপুরের দিকে মোদির সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে সংঘাত নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্রগুলো সিএনএন’কে জানিয়েছে, ভ্যান্স মোদিকে সরাসরি পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এবং উত্তেজনা কমাতে বিকল্প বিষয়গুলো বিবেচনার জন্য উৎসাহিত করেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করেছে, দুই পক্ষই আলোচনা করছে না এবং তাদের অনতিবিলম্বে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা দরকার। ভ্যান্স মোদিকে সঙ্কট সমাধানে সম্ভাব্য একটি রূপরেখা দেন। যুক্তরাষ্ট্র জানতো, পাকিস্তান ওই রূপরেখাটি মেনে নেবে। যদিও এই ব্যাপারে কর্মকর্তারা বিস্তারিত কিছু জানাননি।
সূত্রগুলো জানায়, ফোনালাপের পর, রুবিওসহ পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তারা রাতভর ভারত ও পাকিস্তানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেন।
সিএনএন বলেছে, যুদ্ধবিরতির চুক্তির খসড়া তৈরিতে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্ত ছিল না। তবে তারা বিষয়টিকে দুই পক্ষকে আলোচনার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার অংশ হিসেবে দেখেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, মোদির সঙ্গে ভ্যান্সের ফোনালাপটি ছিল যুদ্ধবিরতির এই প্রক্রিয়ায় নাটকীয় মোড়।
ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’, অন্যদিকে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান মারসুস’ ঘিরে পাল্টা হামলার মধ্যে শনিবার বিকেলে ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করে। এই নিয়ে এক্সে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। যদিও ভারতের বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ আসেনি_।
দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, দুই দেশ সরাসরি এই নিয়ে কথা বলছে।