নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজার ছেঁয়ে গেছে আমে। আগামী সোমবার (২২ মে) বাজারে আসছে সুস্বাদু ও সুমিষ্ট নওগাঁর আম।
জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জাতভেদে আম পাড়ার তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছে। নিরাপদ, বিষমুক্ত, পরিপক্ব ও স্বাস্থ্যসম্মত আম বাজারজাত নিশ্চিতে স্থানীয় আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগেই নওগাঁর বাজারগুলো গোপালভোগ ও গুটি আমে ছেঁয়ে গেছে। বর্তমানে বাজারে জাতভেদে ৭০–১০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে এই আমগুলো। এই আমগুলো রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানায় দোকানীরা। তবে বাজারে পাওয়া আম স্বাস্থ্যসম্মত কিনা কিংবা অধিক মুনাফা পাওয়ার আশায় রাসায়নিক ভাবে পাঁকানো হয়েছে কিনা এই বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত মনিটরিং করার দাবী জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির ভোক্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলায় (২২ মে) সোমবার থেকে স্থানীয় গুটি জাতের আম পাড়া যাবে। উন্নত জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ আম (২৮ মে), খিরসাপাত, হিমসাগর আম (২ জুন) থেকে পাড়া যাবে। নওগাঁয় উদ্ভাবিত অত্যন্ত সুস্বাদু ও সুমিষ্ট জাতের আম নাগফজলি আম (৭ জুন), ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙ্গা আম (১০ জুন), ফজলি আম (২০ জুন)। আম্রপালি আম (২২ জুন) থেকে পাড়া যাবে। সর্বশেষ (৮ জুলাই) থেকে আশ্বিনা, বারী–৪, গৌরমতি, কাটিমন জাতের আম পাড়তে পারবেন চাষীরা। তবে নির্ধারিত সময়ের আগে আবহাওয়াজনিত কারণে আম পরিপক্ক হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা কৃষি অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে তারিখ পুন:নির্ধারণ করা যাবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয়ের উপ–পরিচালক কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গতবারের চেয়ে এবার নওগাঁর বাগানগুলোতে আমের ফলন ভালো হয়েছে। বাগানের গাছগুলোতে গতবারের চেয়ে আম ধরেছে বেশি। তবে গাছে আম বেশি ধরার কারণে এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলা তীব্র তাপদাহের কারণে আমের আকার এবার কিছুটা ছোট হতে পারে। আমের আকার ছোট হলেও গাছে আম বেশি ধরায় আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কম হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, জেলায় চলতি বছর ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫২৫ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫০ টন হিসেবে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি চলতি বছর আমের বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি ছাড়িয়ে যাবে। গত বছর নওগাঁ জেলা থেকে ৭৭ মেট্টিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হলেও এ বছর প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মেট্টিক টন আম বিদেশে রপ্তানি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বেশ কিছু আম চাষিকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী উত্তম কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে আম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, নওগাঁর ব্র্যান্ডিং হচ্ছে আম। নওগাঁর আম সারা বাংলাদেশের আমের বাজারে সুনামের সঙ্গে রাজত্ব করে আসছে। জেলায় উৎপাদিত আম সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। আম পাড়ার নির্ধারিত সময়ে আম পাড়লে এবং বাজারজাত করলে আমের মান ভালো থাকে, অন্যথায় আমের সুনাম নষ্ট হয়। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতেই আম বাজারজাতকরণের দিন ঠিক করা হয়েছে। আমে ভেজাল ঠেকাতে পরিবহনের আগে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহার উপজেলা সদর বাজার, পোরশার নোচনাহার, সারাইগাছীসহ বিভিন্ন বাজারে প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি রাখা হবে। এছাড়াও বাহিরের পাইকাররা যেন সুষ্ঠ ও সুন্দর পরিবেশে নওগাঁর আম কিনে নিয়ে সড়কে কোন ভোগান্তি ছাড়াই যেতে পারেন সেই বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
যূথী/দীপ্ত সংবাদ