টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের নজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.হাবিবুর রহমান ও সভাপতি রুঞ্জু আহামেদ ওরফে ড্রেজার খাজার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম ও বেপরোয়া কর্মকান্ডসহ নিয়োগ বাণিজ্যে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সহ ভুক্তভোগিরা ।
জানা যায়, গোপন কমিটির সভাপতি রঞ্জু আহামেদ ওরফে ড্রেজার খাজার মদদে অনিয়ম করে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান। সভাপতির অত্যন্ত আস্তাভাজন প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান সরকারি বিধি ভঙ্গ কওে সম্প্রতি চারটি পদে জনবল নিয়োগ দিয়ে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে জানা যায়। জনবল নিয়োগের জন্য মার্চের ১ তারিখে দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চারটি পদে প্রায় ৮০ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকৃতদের মধ্য থেকে মাত্র ১৭/১৮ জন্য আবেদনকারী কে পরিক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়। বাকী আবেদন কৃতরা প্রবেশ পত্রে রোল নং ও কেন্দ্রের নাম না থাকায় পরীক্ষা দিতে পারেনি।
আরও জানা যায়, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির কারসাজিতে ১৬ এপ্রিল পাতানো নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন বিকেলেই চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কম্পিউটার ল্যাব সহকারী অপারেটর পদে প্রধান শিক্ষকের ছেলে মো. হাফিজুর ইসলাম, আয়া পদে সভাপতি রঞ্জু আহামেদের বোন মোছাঃ খালেদা ও নিরাপত্তাকর্মী মাহাবুর রহমান এবং পরিছন্নীকর্মী মো.ছানোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেয়া হয়। অন্যান্য আবেদনকারীদের কাছ থেকে ওই সব পদে জন্য মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে ও চাকরি দেননি বলে জানা যায়।
সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকতাদের আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ প্রদান করেন। আবেদনকারীদেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। বিদ্যালয়ের জমি দাতা নজর আলীর ছেলে মো. দুলাল হোসেনের নিকট মোটা অংকের টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষক। দুলাল দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় তাকে রোল নং ও পরিক্ষা কেন্দ্রের নাম উল্লেখ ছাড়াই প্রবেশ পত্র দেয়া হয়। যার ফলে নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে নাই সে। এমন অভিযোগ করেন আরো অনেক প্রার্থী।
এ ব্যাপারে ১৩ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত ৪ সদস্য মো. বাবুল আক্তার, মো. সাজ্জত হোসেন, এম আজিজুল হক পান্না ও মো. জমির উদ্দিন মাষ্টার বাদী হয়ে ঢাকা হাই কোর্টে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানিয়ে ০২ জনকে বিবাদী করে একটি মামলা করেন।
কেঁচো খুড়তেই বেরিয়ে আসে সাপ। এ যেন দুর্নীতির আতর ঘর। ২০২১ সালে করোনার জন্য এসএস সি পরিক্ষার্থীদের সকল বোর্ডের ফরম ফিলাপের টাকা ফিরত দেওয়ার জন্য ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছাত্র–ছাত্রীদের টাকা ফিরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান অভিভাবক ও ছাত্র ছাত্রীরা। ২০২৩ সালের এসএসসি পরিক্ষার জন্য বেশ কয়েক শিক্ষার্থীও কাছ থেকে ফরম ফিলাপের জন্য ৩ থেকে ৪ হাজার করে টাকা নিয়েও তাদের ফরম ফিলাপ করেনি প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে সরকার ঘোষিত উপবৃত্তি জন্য শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা উত্তোলন করেন।
অভিবাবক ও ছাত্র–ছাত্রীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে স্কুলে দূর্নীতি করে আসছে। ফরম ফিলাপে অতিরিক্ত টাকা নেয়া, ২০২১ সালের করোনাকালীন ফরম ফিলাপ টাকা ফিরত না দেয়া, উপবৃত্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। নাইট গার্ড দিয়ে ক্লাস নেয়া হয় বলে জানান ছাত্র–ছাত্রীরা।
ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সদস্য মো.বাবুল আক্তার ও মো. সাজ্জত হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্নীতি করে আসছে। আমরা প্রতিবাদ করি বলে কোন মিটিং এ আমাদেও ডাকা হয় না। তাদের সকল দুর্নীতির প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে বলেও তারা জানান। তারা দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির অপসারণ চান।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মো.হাবিবুর রহমান বলেন, কোন অনিয়ম হয়নি। আমার ছেলে পরীক্ষায় পাস করেছে নিয়ম অনুযায়ী চাকরী হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন ২০২১ সালের ফরম ফিলাপের টাকা উত্তোলন করা হয়নি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রঞ্জু আহামেদ বলেন, আমার বোন খালেদা ও ভাগ্নীর জামাতা মো.মাহাবুর হোসেন তাদের মেধায় চাকরী হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহীনুর ইসলাম বলেন, নিয়োগ ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হয়নি। যদি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় সেটা অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। যদি প্রমাণ হয় তাহলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুমন খান/আফ/দীপ্ত নিউজ