গাজীপুরে মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) নামে এক সাংবাদিককে জনসম্মুখে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার মসজিদ মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধির কাজ করতেন। তুহিন ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
স্থানীয়রা জানান, রাতে তুহিন মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে। পরে উপস্থিত লোকজনের সামনেই তাকে কুপিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তুহিনের মৃত্যু হয়।
নিহত তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে আমরা একসাথেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন মহিলা কিছু লোকজন নিয়ে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছিল। তুহিন দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিল। তারপর থেকেই আর তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দোকানের সামনে জটলা দেখে এসে দেখি তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পড়ে আছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। পরে তিনজন আমার দোকানের ভেতরে ঢুকে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় দোকানের বাইরে দুজন রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমি বাধা দিতে গেলে তাঁরাও আমাকে কুপিয়ে হত্যা করার হুমকি দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় অনেক লোক তাকিয়ে দেখেছে, কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসেনি।’
নিহত তুহিনের সহকর্মীরা জানান, হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা আগে তুহিন চান্দনা চৌরাস্তার ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজি নিয়ে একটি ফেসবুক লাইভ করেন। এরপর সন্ধ্যায় নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আরও একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে রাস্তার অব্যবস্থাপনার বিষয়ে মন্তব্য করেন।
সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন–এর ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় চৌরাস্তা এলাকার একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেন, ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য, গাজীপুর চৌরাস্তা।’ এর দুই ঘণ্টা আগে জয়দেবপুর রেলগেটের দেয়ালের পাশের একটি ছবি দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘জয়দেবপুরে যাঁরা যাতায়াত করেন, এই রাস্তাটুকু আপনাদের চেনা। ড্রেন সংস্কার না করায় এত সুন্দর রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় জনগণের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।’
গাজীপুর বাসন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন খান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিসি রবিউল আলম বলেন, ‘আমরা কিছু ফুটেজ ও ক্লু পেয়েছি। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। জড়িত কেউই ছাড় পাবে না।’
এসএ