বিশ্বব্যাপী পিতৃত্বকালীন ছুটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়। এই ছুটি পরিবারের সুস্থতা, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এবং মায়েদের কর্মজীবন সহজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটির নীতি ও সুবিধা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এ বিষয়ে এখনও কোনো নীতিমালা নেই। বিভিন্ন দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটির নিয়ম–কানুন ও সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো:
১. সুইডেন
সুইডেন পিতৃত্বকালীন ছুটি বিষয়ে বিশ্বের সবচেয়ে উদার দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে নবজাতকের বাবা এবং মা উভয় মিলিয়ে মোট ৪৮০ দিন (প্রায় ১৬ মাস) ছুটি নিতে পারেন। বাবাদের জন্য নির্দিষ্ট ৯০ দিন বাধ্যতামূলক ছুটি রয়েছে, যা শুধুমাত্র বাবার জন্য নির্ধারিত। সুইডেনে পিতৃত্বকালীন ছুটির সময় কর্মীরা তাদের নিয়মিত বেতনের ৮০% পর্যন্ত ভাতা পান।
২. ফিনল্যান্ড
পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং ভাতা প্রদানে বিশ্বের অন্যতম উদার দেশ ফিনল্যান্ড। এখানে কর্মীরা ৫৪ দিন (প্রায় ৯ সপ্তাহ) পর্যন্ত পিতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারেন। এর মধ্যে প্রথম ১৮ দিন বাধ্যতামূলক। ফিনল্যান্ডে পিতৃত্বকালীন ছুটির সময়ে কর্মীদের বেতন অনুযায়ী ভাতা প্রদান করা হয়। কর্মীরা তাদের নিয়মিত বেতনের ৭০% থেকে ৮০% পর্যন্ত ভাতা পান। এই ভাতা সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।
৩. নরওয়ে
নরওয়ে পিতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম উদার দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটিতে পিতৃত্বকালীন ছুটি বাধ্যতামূলক। এই ছুটি বাবাদের সন্তানদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটানোর সুযোগ দেয়। এখানে বাবারা পূর্ণ বেতনসহ ১০ সপ্তাহ এবং পরবর্তী ৫ সপ্তাহ ৮০% বেতনসহ ছুটি নিতে পারেন।
৪. জার্মানি
জার্মানি পিতৃত্বকালীন এই ছুটির সুযোগ পিতামাতাদের উভয়ের জন্যই রয়েছে। দেশটিতে পিতৃত্বকালীন ছুটি (Parental Leave) মায়ের সাথে ভাগাভাগি করা যায়। বাবা এবং মা উভয়ে মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩৮০ দিন (১৪ মাস) ছুটি নিতে পারেন। এই ছুটি শিশুর জন্মের পর যেকোনো সময়ের মধ্যে নেয়া যায়, তবে এটি একসাথে না নিয়ে একাধিক পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ছুটিকালীন সময়ে, বাবা এবং মা “Elterngeld” ভাতা পান। এই ভাতা প্রথম ১২ মাসে মূল বেতনের ৬৫% থেকে ৬৭% পর্যন্ত, যা সর্বাধিক ১৮০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। যদি বাবা এবং মা উভয়েই ছুটি নেন, তাহলে তারা অতিরিক্ত ২ মাসের বোনাস পান, ফলে মোট ছুটির দৈর্ঘ্য হয় ১৪ মাস।
৫. ফ্রান্স
ফ্রান্সে পিতৃত্বকালীন ছুটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হয়। ২০২১ সালে এই ছুটির সময়সীমা বাড়িয়ে ২৫ দিন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ দিন বাধ্যতামূলক ছুটি অন্তর্ভুক্ত। যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে এই ছুটির সময়সীমা ৩২ দিন। এই সময়ে কর্মীরা প্রথম ৪ দিন পূর্ণ বেতন, এবং পরবর্তী ১১ দিন ৮০% বেতন পাবেন। বাকি দিনগুলোতে সম্ভবত ন্যূনতম মজুরি দেয়া হয়।
৬. যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্যে পিতৃত্বকালীন ছুটির সুসংগঠিত নীতি রয়েছে, যা বাবাদেরকে সন্তান জন্মের পর তাদের পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ দেয়। দেশটিতে বাবারা সাধারণত ২ সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারেন। এই ছুটি শিশু জন্মের পর প্রথম ৫৬ দিনের মধ্যে যেকোনো সময় নেয়া যেতে পারে। এই সময়ে কর্মীরা সাপ্তাহে ১৭২ পাউন্ড বা সাপ্তাহিক গড় বেতনের ৯০% (যেটি কম হবে) মজুরি পাবেন। যুক্তরাজ্যে পিতৃত্বকালীন ছুটি ঐচ্ছিক এবং কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করতে পারে।
৭. কানাডা
উত্তর আমেরিকার এই দেশে পিতৃত্বকালীন ছুটি ৫ সপ্তাহ। এই সময়ে কর্মীরা ৫৫% বেতন পাবেন বিভিন্ন প্রদেশের প্রাদেশিক নীতির উপর নির্ভর করে। পিতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে ভিন্ন নীতি রয়েছে। তবে সাধারণত সব প্রদেশেই বাবা এবং মা উভয়ের জন্য সুবিধা রয়েছে।
৮. অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ায় পিতৃত্বকালীন ছুটি ২ সপ্তাহ। এই সময়ে কর্মীরা ন্যূনতম মজুরি পাবেন। দেশটিতে পিতৃত্বকালীন ছুটি সাধারণত কম, তবে কর্মক্ষেত্রের নীতির উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়।
৯. জাপান
জাপানে পিতৃত্বকালীন ছুটি ১ বছর। এর মধ্যে প্রথম ৬ মাস ৫০% এবং পরবর্তী ৬ মাস ৩০% বেতন পাবেন কর্মীরা। বাবাদের জন্য উল্লেখযোগ্য হলেও এই ছুটি গ্রহণে কোনো বধ্যবাধকতা নেই। কাজেই দেশটিতে পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবহার এখনো অনেক কম।
১০. বাংলাদেশ
বাংলাদেশে কিছু সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পিতৃত্বকালীন ছুটি ৩ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এখনও সরকারীভাবে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই।
এমবি/এসএ/দীপ্ত সংবাদ