তুরস্কের সঙ্গে চার দশক ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংঘাতের ইতি টেনে স্বেচ্ছায় নিজেদের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা সহিংসতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের পথ সুগম হলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পিকেকের ঘনিষ্ঠ ফিরাত নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে সোমবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দলটি সম্প্রতি ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আয়োজিত এক কংগ্রেসে নিজেদের বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেয়। ওই কংগ্রেসে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেতা আবদুল্লাহ ওকালানের দৃষ্টিভঙ্গি ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বানসংবলিত একটি বিবৃতিও পাঠ করা হয়।
এরপর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে পিকেকে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ এবং সংগঠন বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে একটি বাস্তবসম্মত, দায়িত্বশীল ও শান্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা জনগণকে খুব শিগগিরই জানানো হবে।‘
তবে এই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।
১৯৮৪ সালে কুর্দি জনগোষ্ঠীর জন্য একটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে পিকেকে। সময়ের সাথে সাথে তারা স্বাধীনতার দাবির বদলে দক্ষিণ–পূর্ব তুরস্কে স্বায়ত্তশাসন ও সাংস্কৃতিক অধিকারের মতো দাবি তুলতে থাকে।
এই দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, পিকেকে যোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিক।
পিকেকে এবং তাদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলো প্রায়ই তুরস্কের সেনা ঘাঁটি, সামরিক যান ও অবকাঠামোর ওপর হামলা চালিয়ে আসছিল। তাদের উপস্থিতি শুধু তুরস্কেই নয়, বরং প্রতিবেশী সিরিয়া ও ইরাকেও বিস্তৃত ছিল।
তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পিকেকে–কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
পিকেকে নেতা আবদুল্লাহ ওকালান ১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের কাছে ইমরালি দ্বীপের একটি কারাগারে বন্দি আছেন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওকালান তার অনুসারীদের উদ্দেশে পাঠানো একটি বার্তায় অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান এবং তুর্কি সরকারের সঙ্গে স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে পিকেকে বিলুপ্ত করার পরামর্শ দেন।
বিলুপ্তির ঘোষণার পর পিকেকে আঙ্কারার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন এই যুদ্ধবিরতি ও শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে ওকালানকে মুক্তি দেয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, পিকেকে–র এই সিদ্ধান্ত তুরস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। যদি তুর্কি সরকার এই শান্তি উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে এবং পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যায়, তবে দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের স্থায়ী অবসান সম্ভব।
তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এটিও মনে করছেন যে, তুরস্কের রাজনীতি ও নিরাপত্তা কাঠামোতে পিকেকে–র ভূমিকাকে কেন্দ্র করে যে জটিলতা ও সংশয় রয়েছে, তা নিরসনে সরকারের পরবর্তী অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।