শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

পাহাড় ধসে ১২০ জনের মৃত্যুর ৬ বছর পরও কমেনি ঝুঁকিতে বসবাস

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

বর্ষা মানেই পাহাড় ধসের শঙ্কা। রাঙামাটিতে ২০১৭ সালের ১৩জুন পাহাড় ধসে ১২০জন মারা যাওয়ার পরও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বেড়েছে বসতি। কিন্তু এরপরও থামেনি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস।

সে সময় তদন্ত কমিটির দেয়া সুপারিশমালারও হয়নি বাস্তবায়ন। প্রশাসনের তথ্যমতে, শহরে ৩১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি স্থাপন বন্ধে সমন্বয়ের কথা বলছেন সুশীল সমাজ। আর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন বন্ধে সকলের সহযোগিতা চাইলেন জেলা প্রশাসক।

২০১৭ সালের ১২জুন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় বৃষ্টি, মধ্যরাত থেকে শুরু হয় বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টি রাত, তিনটার পর থেকে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের খবর শোনা যায়। আর ১৩ জুন ভোরের আলো ফুটতেই শহরের ভেদভেদী, মোনতলা, রাঙ্গাপানি, শিমুলতলি, মুসলিম পাড়া ও লোকনাথ মন্দির এলাকা, সদর উপজেলার মগবান ও সাপছড়ি ইউনিয়নসহ ৫টি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির খবর আসতে থাকে। ভারি বৃষ্টির মধ্যেই শুরু হয় হাসপাতালে লাশের মিছিল। এতে রাঙামাটি জেলায় পাঁচ সেনা সদস্যসহ প্রাণ যায় ১২০জনের।

রাঙামাটিচট্টগ্রাম, রাঙামাটিখাগড়াছড়ি, রাঙামাটিবান্দরবান সড়কের অন্তত ১৪৫টি জায়গায় পাহাড় ভেঙ্গে মাটি পড়ায় ও সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় রাঙামাটির সাথে বন্ধ হয়ে যায় সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ। তিনদিন বিছিন্ন ছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। যার ৮দিন পর স্বল্প পরিসরে চালু হয় সড়ক যোগাযোগ। ঘরবাড়ি, স্বজন হারানো দুই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নেই আশ্রয়কেন্দ্রে। বছর ঘুরে দিনটি ফিরে এলে রাঙামাটিবাসীর মনে দেখা দেয় আতঙ্কের সেই ভয়াল স্মৃতি।

কিন্তু সেই ভয়াল স্মৃতি ধারণ করেও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বেড়েছে বসতি স্থাপন। পাহাড়ের দুইপাশ জুড়েই ঘরবাড়ি। কোথাও কোথায়ও তৈরি হয়েছে ইমারত। এই চিত্র শহরের শিমুলতলী, রূপনগর, সনাতন পাড়া, যুব উন্নয়ন ও রাঙাপানি এলাকার। স্থানীয়দের তথ্যমতে ২০১৭ সালের পরে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আরও অন্তত ৫শত নতুন পরিবার বসতি স্থাপন করেছে।

অথচ ২০১৭ সালের ১৩জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২০ জনের পরও ২০১৮ সালে ১২জুন নানিয়াচরে ১১ জনের মৃত্যু হয় রাঙামাটিতে। সব মিলিয়ে ২০১৭ সালের পর অন্তত আরো ১৫ জনের মৃত্যু হয় পাহাড় ধসে। ২০১৭ সালে পাহাড় ধসের পর তদন্ত কমিটি পাহাড় কাটা, পাহাড়ের টিলায় বসতী স্থাপন বন্ধ, পরিবেশ বান্ধব বৃক্ষরোপনের মতো বেশ কিছু সুপারিশ করে। কিন্তু সেই ভয়াল রাতের ছয়বছর পেরিয়ে গেলেও সুপারিশমালার বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি। বরং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নাগরিক সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যু জেনেও বসতি নির্মাণে আগ্রহ বেড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষের। শত ঝুঁকি জেনেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নয় বসবাসকারীরা।

রাঙামাটি শিমুলতলী এলাকারবাসীন্দা আমেনা আক্তার জানান, ‘আমি এখানে জায়গা কিনে বসবাস করছি। ঝুঁকি জানলে কি হবে, আমারতো অন্যকোন জায়গা নাই যে আমি ঐখানে যাব। যার কারণে এখানেই বসবাস করি। সৃষ্টিকর্তাই ভরসা।

ফাতেমা আক্তার জানান, ‘আমি দুই বছর হলো জায়গা কিনেছি। ছয়মাস হলো ঘর তৈরি করে এখানে এসেছি। এখনোতো কোন সমস্যা হয় নাই। বর্ষা আসলে বলতে পারবো কি হয়।

সুশাসনের জন্য নাগরিক( সুজন) এর রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার জানান, ‘২০১৭ সালের পর রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বেশ কিছু সুপারিশমালা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সব সুপারিশমালার বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাচ্ছি না, অবিলম্বে সেইসব সুপারিশমালা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন সমন্বয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে আশা করছি, না হয় আবারো যেকোন বর্ষায় ২০১৭ সালের চিত্র আমাদের দেখতে হতে পারে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন, এটা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব না। আমরা দুর্যোগকালীন সময়টাতেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করা মানুষদের যখন বলি সেখান থেকে সরে আসতে, তখনতো তারা সরে আসে না। তাদের অনেকেরই পরিবার ২০১৭ সালে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু তারা সেটাকেও কেন জানি ভুলে যাচ্ছে। সুপারিশমালা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন, সকলে এগিয়ে আসলে এটা বাস্তবায়ন সম্ভব।

২০১৭ সালের জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার লোক পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাস করছে।

 

মিশু দে/আফ/দীপ্ত নিউজ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More