ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, টাকা–পয়সা ও সম্পদের কমতি ছিলো না। অবসর নেওয়ার পর সম্প্রতি গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পরেন শিক্ষক আব্দুল আজিজ মৃধা। ৭০ বছর বয়েসী আজিজ মারা যান মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকালে।
বুধবার (১২ জুলাই) সকাল ১০টায় জানাজা শেষে তার দাফন হওয়ার কথা ছিলো। যে কারনে স্থানীয় একটি মাদরাসার কবরস্থনে তার কবরও খোড়া হয়। কিন্তু জানাজার সময় ঘটে বিপত্তি। বিভিন্ন সময় এলাকার লোজনের কাছ থেকে ধার করে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন আজিজ মৃধা। বিষয়টি নিয়ে পাওনাদারেরা এসে ভিড় করেন জানাজাস্থলে। তার স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে টাকা দাবী করেন।
এসময় পাওনাদাররা টাকা চাওয়ায় লাশ ফেলে পালিয়ে যায় তার ২য় স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরা। এমন পরিস্থিতিতে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় ৫ঘন্টা তার মরদেহ পড়েছিল একটি মসজিদের অজুখানার পাশে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দুপুর আড়াইটার দিকে জানাজা শেষে দাফন করা হয় আজিজ মৃধার মরদেহ। ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সদরের রায়েন্দা ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ মৃধা। ছিলেন তাফালবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সেখান থেকেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহন করেন তিনি। তার দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। গত ২০ বছর পূর্বে প্রথম স্ত্রী ও তার সন্তানদের ফেলে উপজেলার রায়েন্দা বাজারস্থ পাঁচরাস্তা এলাকায় নতুন বাড়ী করে ২য় স্ত্রী নিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং প্রথম স্ত্রী পরিবারের খোঁজ খবর রাখা বন্ধ করে দেয়। প্রথম স্ত্রীর ঘরে তার ২ পুত্র ও ৩ কন্যা রয়েছে। ২য় স্ত্রীর সংসারে ২ পুত্র ও ১ কন্যা নিয়ে তার সংসার জীবন। তার সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ বিক্রি করে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মতো ২য় স্ত্রীর একাউন্টে জমা দেন। এরই মধ্যে গত দুই বছর পূর্বে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে মাষ্টার আজিজুর রহমান। ধীরে ধীরে তার শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটে। গত ৬ ধরে বিছানায় পড়ে ছিলেন।
এর মধ্যে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকাল ৪ টায় রায়েন্দা বাজারস্থ পাঁচরাস্তা এলাকায় তার বাসায় মৃত্যু বরণ করেন আজিজুর রহমান। মৃত্যুর পর বড় স্ত্রী সন্তানেরা তাদের বাড়িতে বাবার মৃত দেহ দাফন করার দাবি করলে দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানেরা তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেয়। পরে ১২ জুলাই সকাল ১০ টায় জানাযার সময় নির্ধারণ করে এবং জানাযা শুরু করবে আগ মুহুত্রে উপজেলার চাল রায়েন্দা গ্রামের অপু ১ লক্ষ ৫০ হাজারসহ রায়েন্দা বাজারের ৫/৬ জন ব্যবসায়ীরা প্রায় ৬ লক্ষ টাকা পাওনা দাবি করেন এবং পাওনা টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত জানাযা পড়ানো যাবেনা বলে তারা অভিযোগ করেন। এঘটনা শোনার পরে তার স্ত্রী, পুত্র সন্তানেরা বাবার মরদেহ জানাযা মাঠে রেখে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
নিহতের প্রথম সংসারের বড় ছেলে মতিয়ার রহমান বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী–সন্তানদের চাপে বাবা আমাদের কোনো খোঁজ নিতেন না। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর কৌশলে তার সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করে দ্বিতীয় স্ত্রী– সন্তানরা। কিন্ত বাবার কোনো দেনা শোধ করেনি তারা। জানাজার সময় পাঁচ জন পাওনাদার এসে টাকা দাবি করলে দ্বিতীয় ঘরের সন্তানরা বাবার লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। এমতাস্থায় বেওয়ারিশ হিসেবে বাবার লাশ দাফনের জন্য স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এজন্য উপজেলার মালিয়া আল–ফালাহ্ মাদরাসার কবরস্থানে তার কবর প্রস্তুত করা হয়েছিল। পরে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের মধ্যস্ততায় পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধে আশ্বস্ত করার পর জানাজা সম্পন্ন হয়। বাবার লাশ আমাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করি।
এ ব্যাপারে ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিদের্শনা অনুযায়ী পরিবারের লোক ও পাওয়ানাদাদের সঙ্গে আলোচনা করে লাশের জানাজা শেষে আজিজ মাষ্টারের প্রথম সংসারের বড় ছেলে মতিয়ার রহমানের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী–সন্তানদের কাছ থেকে আত্মসাতকৃত জমি ও অর্থ উদ্ধার করে ঋণ পরিশোধ করা হবে।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর–ই আলম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানকে বিষয়টি সমাধান করে লাশের জানাজা ও দাফনের জন্য বলা হয়। পাওনাদাররা যাতে তাদের টাকা পেতে পারেন সেব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মামুন আহমেদ/ আল / দীপ্ত সংবাদ