তথ্য প্রযুক্তি বর্তমানে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করছে। এর অন্যতম উদাহরণ হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই। এই দশকের শুরুর দিকে শুরু হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমাজের বিভিন্ন অংশে এর প্রভাব বিস্তার করা শুরু করেছে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার–প্রচারণার ক্ষেত্রেও এআই বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে; যা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলছে। ঠিক যেভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে–
উদ্দেশ্যমূলক প্রচার অভিযান
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত অ্যালগরিদম প্রচুর পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে ভোটারদের আচার–ব্যবহার, পছন্দ–অপছন্দ এবং তাদের মনস্তত্ত্ব শনাক্ত করতে সক্ষম। ফলে ভোটের প্রচার অভিযানগুলো এমনভাবে চালানো হয় যা প্রত্যেকজন আলাদা ভোটারের পছন্দের আওতায় আসে এবং নির্দিষ্ট দলগুলোর প্রতি তারা মোটিভেটেড হয়ে থাকেন।
ভবিষ্যৎ বাণী বিশ্লেষণ
‘মেশিন লার্নিং এলগরিদম’ ব্যবহার করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সঠিকভাবে নির্বাচনী ফলাফলের ভবিষ্যৎবাণী করতে পারে। বিগত দিনগুলোতে ভোটারদের ভোট প্রদানের ধরন, সামাজিক–অর্থনৈতিক বিভিন্ন নির্দেশক, বর্তমান ভোটের জরিপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া রিয়েল টাইম ( বর্তমান) তথ্য বিশ্লেষণ করে এই প্রক্রিয়া খুব সহজেই নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল বলে দিতে পারে। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ভোটের সে সম্ভাব্য ফলাফল অনুসারে তাদের নির্বাচনী কৌশল এবং প্রচার–প্রচারণা চালাতে পারেন যা নির্বাচনে জয়লাভের পথকে সহজ করে।
মিথ্যা তথ্য শনাক্তকরণ
মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়া সংবাদ প্রচার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় হুমকি। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যের তৈরি সফটওয়্যারগুলো অনলাইনে মিথ্যা তথ্যের প্রচার এবং প্রসারকে শনাক্ত করতে সক্ষম। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (এনএলপি) অ্যালগরিদম মিথ্যা তথ্য, তথ্যপ্রচারের ধরন ও তার ফলে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়াকে শনাক্ত করতে সক্ষম। ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের নির্বাচনী দল পছন্দ ও ভোটপ্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করা সম্ভব।
তথ্য বিশ্লেষণ (ফ্যাক্ট চেকিং)
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন তথ্য বিশ্লেষক (ফ্যাক্ট চেকার) এর মাধ্যমে তথ্য বিশ্লেষণ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দল গুলো দেয়া প্রতিশ্রুতি গুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব, যার ফলে নির্বাচনী দলগুলোর আলোচনা এবং স্বচ্ছতা বিশ্লেষণ করে ভোটারগণ সঠিক ভোট প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন।
অধিক সংখ্যক ভোটারের সংশ্লিষ্টতা
চ্যাটবট এবং ভার্চুয়াল এসিসটেন্স –এর ব্যবহারের মাধ্যমে ভোটারদের প্রশ্নোত্তর এবং রিয়াল টাইম নির্দেশনা প্রদান করা সম্ভব। যার ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রচুর ভোটারদের সংযুক্তি ঘটানো সম্ভব হয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভোটারদেরকে সামাজিক সংযুক্তি এবং ভোটপ্রদানে ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে পারে।
নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের ভালো এবং খারাপ দিক দুটোই রয়েছে। একদিকে যেমন মিথ্যা তথ্যের প্রচার এবং প্রসার ঘটিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজের স্বার্থ হাসিলের ব্যবস্থা করতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ন্ত্রক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো প্রচার–প্রচারণা বন্ধ এবং ভোটারদেরকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটারদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসু করতে পারে যদি এর নেতিবাচক ব্যবহার কমানো সম্ভব হয়।
মো. শহিদুর রহমান
গণমাধ্যম কর্মী