পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়ম ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিষয়টি চলতে থাকলেও এটি নিয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। প্রশাসনও এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনকে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি পাবনা শহরে অবস্থিত মানামা অরণ্য টাওয়ারের ১২ তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে থেকে আসছেন। গেস্ট হাউজে অতিথিদের থাকার জন্য চারটি এসি রুম আছে। এর জন্য একজন অতিথিকে দিনে ২৫০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট রুমে থাকার নিয়ম অনুযায়ী কোনো অতিথি গেস্ট রুমে থাকার জন্য গেস্ট হাউজ প্রশাসক সর্বোচ্চ সাত দিন ছয় রাত থাকার অনুমতি দিতে পারেন। কিন্তু কোষাধ্যক্ষ এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের একটি রুম ব্যবহার করে আসছেন।
কোষাধ্যক্ষের এভাবে একটি রুম ব্যবহারে শিক্ষকদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষকরা উপাচার্যকে বিষয়টি একাধিকবার অবহিত করতে চাইলেও উপাচার্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিভাগেই প্রশ্ন মডারেশন, মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হতে অনেক শিক্ষক আসেন। উনাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে। গেস্ট হাউজে এমনিতেই রুম সংকট, তার ওপর কোষাধ্যক্ষ একটা রুম দখল করে রেখেছেন। প্রায় সময়ই দেখা যায় অতিথিদের রাখার জন্য গেস্ট হাউজে জায়গা পাওয়া যায়না। ফলে অতিথিকে কোথায় রাখবো সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় আমাদের। গেস্ট হাউজ প্রশাসক এবং উপাচার্যকে বিষয়টি অবহিত করলেও তারা সমস্যাটি সমাধানে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসে থাকেন, উপ–উপাচার্য বাসা ভাড়া করে থাকেন অথচ কোষাধ্যক্ষ গেস্ট হাউজের একটা রুম দখল করে বসে আছেন। সরকার উনার চাকরির জন্য বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন কিন্তু তিনি বাসা ভাড়া নিচ্ছেন না।
তবে একটি সূত্র বলছে, কোষাধ্যক্ষকে গেস্ট হাউজে থাকার জন্য উপাচার্যের সম্মতিতে এপ্রিল মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত অনুমতি দেন। এর জন্য মাসিক ভাড়া সাত হাজার পাঁচশ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অভিযুক্ত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এভাবে (মুঠোফোনে) কথা বলবো না।’ একথা বলেই ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য পাওয়ায় যায়নি।
নিয়ম ভেঙ্গে গেস্ট হাউজে কোষাধ্যক্ষ মাসের পর মাস থাকছেন সে বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ প্রশাসক ড. আবদুল্লাহ আল মামুনের সাথে সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু রাজি হননি। এ বিষয়ে তিনি প্রশানের সাথে কথা বলার জন্য বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বক্তব্য দিতে অস্বীকার করে অফিসিয়াল সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ বিভাগে যোগাযোগের কথা বলেন।
উল্লেখ্য পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগভাটোয়ারা, লিফট কেনার জন্য তুরস্ক সফর, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারে সহ নানা অভিযোগ এসেছে।
শামসুল আলম/ আল/ দীপ্ত সংবাদ