শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

বিয়েতে দেনমোহর হিসেবে কনে নিলেন ৫ টি গাছের চারা

Avatar photoদীপ্ত নিউজ ডেস্ক

 

অর্থ কিংবা গহনা নয়, দেনমোহর হিসেবে পাঁচটি গাছের চারা নিয়ে আলোচিত হয়েছেন নাটোরের কনে সুকৃতি আদিত্য। এমন ব্যতিক্রমী দেনমোহরের ৫ টি বনজ ও ফলজ গাছের চারা সুকৃতিনাবিন দম্পতি বিয়ের দিন লাগিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের সামনেই। কারণ হিসেবে এই নব দম্পতি জানান, দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তা দুর করে ভালবাসাটাকে প্রাধান্য দিতেই গাছ নিয়ে তাদের এমন আয়োজন। ব্যতিক্রমি এই আয়োজনে চাঞ্চল্য তৈরী হয়েছে এলাকা জুড়ে।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) নাটোর শহরের দিঘাপতিয়া এলাকায় ঐতিহাসিক উত্তরা গণভবনের পাশে বাবা এম. আসলাম লিটনের বাড়িতে আনন্দউচ্ছ্বাসের মধ্যে সুকৃতিনাবিন দম্পতির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।এরপর মঙ্গলবার(২৪ অক্টোবর) কনের বাবা এম আসলাম লিটন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি জানালে এই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এরই মাঝেই কনে সুকৃতি আদিত্য ও বর নাবিন আদনান গাছের চারা রোপন করে তা পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ৬ বছর ধরে তাদের পরিচয় থাকলেও দুই পরিবারের সম্মতিতে ঘরোয়া পরিবেশেই বিয়ে সম্পন্ন হয় সুকৃতিনাবিনের। তবে তাদের বিয়েতে অন্যতম আকর্ষন ছিল দেনমোহর হিসাবে পরিবেশবান্ধব গাছ। দেনমোহর হিসেবে বরের কাছ থেকে ৫টি ফলজ ও বনজ গাছ নেন কনে সুকৃতি। এমন ব্যতিক্রম বিয়েতে প্রশংসায় ভাসছেন সুকৃতি ও নাবিন দম্পতি।

কনে সুকৃতি ও তার মাবাবার গাছের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে মাবাবার সাথে পরিকল্পনা করে সুকৃতি তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বেছে নেন গাছ। বিয়ের আসরেই মোহরানা হিসেবে ৫টি ফলজ ও বনজ গাছ প্রদান করেন বরপক্ষ। টাকার অংকের হিসাব থেকে বেরিয়ে এসে দেনমোহর নিয়ে সুকৃতির এমন চিন্তা চেতনায় আনন্দিত সবাই।

কনে সুকৃতি আদিত্য বলেন, বর্তমানে অনেক বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতাটা চলছে। আমার মনে হয় তা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। কারণ বিয়েতে আর্থিক লেনদেনটা মুখ্য না। দু’টি মানুষের মনের মিল হওয়াটাই বড় ব্যাপার। সেখান থেকে মনে হলো যে যদি এমন কিছু করা যায় যা আমাদের প্রকৃতিকেও সুস্থ রাখবে। সেই সাথে আমাদের সম্পর্কটাও দৃঢ় রাখবে। তাই নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে আমার মনে হয়েছে, গাছ একটা দারুণ উপকরণ হতে পারে, যেটার মাধ্যমে বিশুদ্ধ অক্সিজেন পেল পরিবেশ।এতে পরিবেশও সুস্থ থাকলো।আমরাও খুশি থাকলাম।

বর নাবিন আদনান জানান, দেনমোহরের বিষয়বস্তুটা হচ্ছে নিরাপত্তা। আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের নিরাপত্তার চাইতে পরিবেশের নিরাপত্তা বেশী জরুরী। এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। এর বাইরে বিশেষ কিছু নয়। প্রতীকী ব্যাপার হিসাবেই আমরা চর্চা করলাম যাতে আমরা পরিবেশ, প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। সুকৃতির ভিন্ন চিন্তাকে স্যালুট জানাই।

কনের বাবা এম.আসলাম লিটন জানান, তার মেয়ে সুকৃতি আদিত্য সিন্ধান্ত নিয়েছিল,বিয়েতে সে মোহরানা নেবে না। নিলেও সে একটা টোকেন নিতে চায়। অভিভাবক হিসাবে তারা সুকৃতির সেই সিন্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার মেয়ে মনে করে মোহরানা নিয়ে টাকার অংক বাড়িয়ে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় সুকৃতি থাকবে না। সমাজকে সে একটা বার্তা দিতে চায় যে, মোহরানাটা মুল নয়। মুলটা হচ্ছে দু’টি মানুষের বন্ধন। দু’টি মানুষের হৃদয় মন এক হয় বিয়ের মধ্য দিয়ে। এই বন্ধনটাই আসল। কোন অর্থনৈতিক বা সম্পদের জায়গায় গিয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার চাইতে আত্মার চুক্তিবদ্ধ হওয়া বেশী জরুরী। সেই জায়গাটা সুকৃতি অনুভব করেছে। বাবা হিসাবে তিনি গর্বিত যে তার মেয়ে এমন ব্যতিক্রম একটা সিন্ধান্ত নিয়েছে।

এ ঘটনায় প্রথমে বরযাত্রী, আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশী রীতিমতো অবাক হলেও পরে সকলেই প্রসংশায় ভাসিয়েছেন নব দম্পতিকে। জীবনের প্রথম এমন বিয়ে দেখে রীতিমতো হতবাক তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা শেলিনা বেগম জানান, তিনি তার জীবনে এমন ব্যতিক্রম বিয়ে দেখেননি। বিয়ে বাড়িতে এসে বর কনের গাছ লাগানো দেখে তার খুব ভাল লেগেছে। নতুন দম্পতি সুখে শান্তিতে থাকুক এমন শুভকামনা জানান তিনি।সাংস্কৃতিকর্মী সৈয়দ মাসুম রেজা বলেন, দেনমোহরে সবসময় কনেদের বা কনেপক্ষকে টাকার অংক বাড়াতে দেখেছি। কিন্তু সুকৃতির বিয়েতে ব্যতিক্রম দেখলাম। তার চিন্তা চেনতা অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য।

নাটোরের বাসিন্দা লিটনসুস্মিতা দম্পতির একমাত্র কন্যা সুকৃতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন একই অনুষদের অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্প নির্দেশক হিসাবে কাজ করছেন। বছর ছয়েক আগে তারা পূর্ব পরিচয় থেকে ভালবাসার বন্ধনে জড়ান। পরে দু’পরিবারের সম্মতি নিয়েই সুকৃতিনাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

 

সাহেদুল / আল/ দীপ্ত সংবাদ

আরও পড়ুন

সম্পাদক: এস এম আকাশ

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন

স্বত্ব © ২০২৩ কাজী মিডিয়া লিমিটেড

Designed and Developed by Nusratech Pte Ltd.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More