একটি দল ‘ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তবে তারা ঠিক কোন দল, তা উল্লেখ করেননি তিনি।
তিনি বলেছেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ীরা তরতরাইয়া জান্নাতে যাওয়ার কথা বললেও মানুষ দুনিয়ায় কীভাবে চলবে, তাদের সে পরিকল্পনা নেই।’
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির আয়োজনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনার কর্মসূচি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ কথাগুলো বলেন।
দলটির সমালোচনা করে তিনি আরও বলেছেন, ‘যে দলের কোনো নীতি–আদর্শ নাই, পরিকল্পনা নাই, শুধুমাত্র ধর্মের নামে একটা ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সাথে প্রতারণা করার পরিকল্পনা করছে। তাদেরকে জনগণ ইতোমধ্যে চিনেছে, তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।’
দিনব্যাপী আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিকেলে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ সময় ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আপনাদের প্রথমেই বলতে হবে, যারা বিনা কষ্টে জান্নাতে যেতে চাচ্ছেন সেটার বাসস্ট্যান্ড কোথায়, একটু জেনে নেবেন। জনগণ এগুলো বোঝে।
‘আমরা বিএনপি যা করছি, সেগুলো হচ্ছে প্ল্যানিং (পরিকল্পনা)। প্ল্যানিং ইজ হাফ অব দ্য জব। ইফ ইউ ডোন্ট প্ল্যান, ইউ আর প্ল্যানিং টু ফেইল। কারণ যদি আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আগের থেকে পরিকল্পনা প্রণয়ন না করি, তাহলে আমরা ফেইল করার জন্যই পরিকল্পনা করলাম। এই কথা আমাদের ধর্ম ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলা হয়ে গেল মনে হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের কাছে সমর্থন চাইছি, ভোট চাইছি। জনগণ আমাদের কাছে কী চায়—তা আমাদের দিতে হবে।
‘আমরা কেবল ধর্মের ট্যাবলেট বিক্রি করতে চাই না। আমরা চাই জনগণের কল্যাণের জন্য, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা কী আছে, সেটা জনগণের সামনে রাখা।’
দেশের জন্য বিএনপির অতীত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘নিরক্ষরতা দূর করতে গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন জিয়াউর রহমান। তবে পরবর্তীতে এরশাদ তা বিলুপ্ত করেন। যতদিন পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি অক্ষরজ্ঞান না হতে পারব, ততদিন চেষ্টা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষার কর্মসূচি চালু করেন। এতে মা–বাবাদের মধ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়। তারা সন্তানদের স্কুলে দিতে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি মেয়েদের বিরুদ্ধে অবৈতনিক শিক্ষা চালু করেন। এগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ক্ষমতায় গেলে আমরা আরও নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করব।’
ফ্যামিলি কার্ড, ফার্মার্স কার্ড, স্বাস্থ্য কার্ডের মত বিষয়গুলো তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে সহজভাষায় তুলে ধরতে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাস্টার ট্রেইনাররা কীভাবে ট্রেনিং দেবেন, জানি না। আমি মনে করি সহজভাবে তাদের বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনাগুলো বলতে হবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সারা দেশে যারা বয়ান দিচ্ছেন যে, জ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিভিত্তিক, মেধাভিত্তিক রাজনীতি করতে হবে, আসলে চর্চা কি আমরা করছি?’ জ্ঞান, মেধা ও প্রযুক্তিভিত্তিক রাজনীতির চর্চার জন্য বিএনপির নেতা–কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমনভাবে কাজটি করতে হবে যাতে অন্য কোনো সংগঠন ধারেকাছেও না আসতে পারে।’
নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “শুধুমাত্র গুলিস্থান থেকে পুরানা পল্টন ‘মানি না’ ‘মানি না’ স্লোগান দিলে হবে না। যখন বিরোধীদলেও থাকব, তখনও আমাদের জ্ঞানভিত্তিক সংগ্রাম করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে।”
এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।