ইসরায়েলের কাতারে হামলার এক সপ্তাহের মাথায় কাতারের রাজধানী দোহায় আরব লীগের সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি কয়েকটি মুসলিম দেশ সম্মেলন করেছে।
৯ই সেপ্টেম্বর কাতারে ইসরায়েলের হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে মুসলিম দেশের নেতাদের দুই দিনের এই বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গাজায় দু’বছর ধরে চলমান যুদ্ধ ও তাতে সৃষ্টি হওয়া মানবিক বিপর্যয় বন্ধে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো।
সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রভাব এবং অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উপায়সমূহও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। আর এই সম্মেলন থেকে নেটোর আদলে ‘জয়েন্ট আরব ফোর্সেস‘ বা যৌথ আরব বাহিনী গঠনের তাগিদ উঠে এসেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ সংস্থাগুলো।
যৌথ আরব বাহিনী:
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি সম্মেলনে ন্যাটো আদলের এই যৌথ বাহিনী গঠনের প্রস্তাব তুলে ধরেন। ন্যাটোর মতো, সদস্য দেশগুলোর একটির বিরুদ্ধে আক্রমণ বা নিরাপত্তাহুমকি দেখা দিলে অন্যান্য দেশগুলো সামরিক সহায়তা প্রদান করবে, এমন মূলনীতিতে বাহিনীটি কাজ করবে বলেই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। এটি আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতা রক্ষা, নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে নিয়োজিত থাকবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বাহিনীতে বিমান, নৌ ও স্থল বাহিনীর একত্রিত রূপ থাকবে এবং প্রত্যেক দেশের অবদান তাদের সামরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে। মিশর কায়রোকে এই বাহিনীর সদর দফতর করার দাবি করছেন সিসি। ২০১৫ সালেও একই ধরনের যৌথ আরব বাহিনী গঠনের আহ্বান করেছিলেন মি. সিসি; তখন বিভিন্ন আরব দেশের অনাগ্রহের কারণে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।
সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ও আহ্বান:
যৌথ বিবৃতিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক সমাজকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগতভাবে চাপ বাড়াতে অনুরোধ করেছে। ওই বিবৃতিতে জাতিসংঘকে ইসরায়েলের সদস্যপদ স্থগিত করারও আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি গাজায় জরুরি ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা, ধ্বংসস্তুপ পুনর্নির্মাণ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে গাল্ফ নিরাপত্তা বোর্ড (GCC)ও একটি পৃথক বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে কাতারে হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে—“GCC-র সহযোগী যে কোনো দেশে হামলা হলে তা সবার ওপর হামলার শামিল”।
‘গাজার যুদ্ধ থেকে নজর সরিয়ে নিতেই কাতারে হামলা‘:
সম্মেলনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেন, ইসরায়েল গাজার যুদ্ধ থেকে বিশ্বদৃষ্টিকে সরিয়ে আনতেই কাতারে হামলা করেছে; যদি ইসরায়েল হামাস নেতাদের হত্যা করতে চায় তাহলে কেন একই সঙ্গে আলোচনার পথও বন্ধ করছে—এ ধরনের প্রশ্ন তুলে তিনি পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো আলাপ আলোচনা অসম্ভব বলে মত ব্যক্ত করেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি বলেন, ইসরায়েলের কার্যক্রম পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলছে এবং এই আগ্রাসনে তারা রাজনৈতিক ও সামরিক সীমা অতিক্রম করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দোহা সম্মেলনের তীব্র সমালোচনা:
দোহায় আরব লীগ ও ওআইসি‘র দেশগুলোর এই জরুরি সম্মেলন নিয়ে অনেকে আশাবাদী হলেও বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন এই সম্মেলন থেকে ইতিবাচক কিছু অর্জন হবে না। কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর কাতারের প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর নিয়েও চলছে সমালোচনা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে এই সম্মেলন থেকে ‘নিন্দা জ্ঞাপন‘ ছাড়া আর কিছু অর্জন হবে না।
ইয়েমেনের রাজনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক শেখ হুসেন হাজেব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে পোস্ট করে মন্তব্য করেছেন যে এই জোটের ‘উত্থানের আগেই মৃত্যু‘ হবে।