দিনাজপুর–৩ (সদর) সংসদীয় আসনটি ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১১ হাজার ৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২ হাজার ৮৮৭ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ১১৫ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছেন ২ জন।
গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭টি আসনের প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করে। তালিকায় দিনাজপুর–৩ আসনে দলীয় চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই জেলায় রাজনৈতিক অঙ্গণে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বহুদিন ধরে বিভক্ত থাকা জেলা ও সদর বিএনপি এই ঘোষণার পর নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে। ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রতিযোগিতা এক ধাক্কায় থেমে যায়
দিনাজপুর–৩ আসনে দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন অন্তত ডজনখানেক নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও বিলবোর্ড টানিয়ে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ৫–৬টি গ্রুপিং তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় দলের সব গ্রুপ এক সিদ্ধান্তে একত্রিত হয়। জেলা, পৌর ও সদর বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন একসুরে খালেদা জিয়ার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। খালেদা জিয়ার বাবা মা ও বড় বোনের কবর জিয়ারত করে প্রচারণা শুরু করে।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি যারা কিছুদিন আগেও একে অপরের মুখ দেখতেন না তারা এখন একসঙ্গে প্রচারে নেমেছেন। দলের সিনিয়র নেতারা প্রথমে দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার বাবা–মা ও বড় বোনের কবরে ফুল দিয়ে দোয়া ও মোনাজাত করে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়।
নেতাকর্মীরা তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা, লিফলেট সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন। বিভিন্ন মোড়ে খালেদা জিয়ার ছবি, নিজস্ব ছবি যুক্ত করে ব্যানার, ফেস্টুন টানানো হচ্ছে।
দিনাজপুরের মেয়ে‘- এই পরিচয়ে ভোটারদের কাছে আকর্ষণ নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের কাছে একটি বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন দিনাজপুরের মেয়ে বেগম খালেদা জিয়া—তিনি নিজের জন্মভূমি থেকে নির্বাচন করছেন, তাকে বিজয়ী করা আমাদের দায়িত্ব। এই প্রচার বার্তাকে ঘিরে গ্রাম–গঞ্জে নতুন একটি উৎসাহ তৈরি হয়েছে।
রাজবাটির ভোটার হামিদুল ইসলাম বলেন, দিনাজপুর–৩ থেকে খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন, এটা আমাদের গর্ব। তাকে সম্মানিত করা মানেই আমাদের নিজেদের সম্মান বাড়ানো। আমরা তাঁর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি বলেন, আমাদের দলীয় প্রধান দিনাজপুরের মেয়ে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। তার প্রার্থিতা ঘোষণার পরই নেতাকর্মীরা এক হয়ে গেছেন। আমরা জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে বলছি, আমাদের প্রিয় নেত্রী এই আসন থেকেই নির্বাচন করছেন। মানুষও আমাদের আশ্বস্ত করছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন,
১৭ বছর ধরে নির্যাতন–নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন বেগম জিয়া। এবার তিনি দিনাজপুর সদর আসন থেকে নির্বাচন করছেন—এটা আমাদের মর্যাদা বাড়িয়েছে। আমরা বেগম জিয়ার বাবা–মা বড় বোনের কবর জিয়ারত করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছি। সাধারণ মানুষের সাড়া অত্যন্ত ইতিবাচক।
উল্লেখ যে, ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশিদ জাহান হক (চকলেট আপা) বিএনপি প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে জয়ী হন।
২০০৮ সালে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বিএনপি–জোটের প্রার্থী হলেও ‘বহিরাগত’ ইস্যুতে আওয়ামী লীগের ইকবালুর রহিমের নিকট পরাজিত হন। প্রথমবারই ইকবালুর রহিম আওয়ামী লীগ থেকে দিনাজপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪—পরপর চারবার জয় পান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইকবালুর রহিম।
এবার খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা ঘোষণার ফলে দিনাজপুর–৩ আসনের রাজনৈতিক সমীকরণ নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। বিএনপি নেতা–কর্মীদের ঐক্য, তৃণমূলে উৎসাহ এবং “দিনাজপুরের মেয়ে” পরিচয়কে সামনে রেখে দলটি ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নেতা–কর্মীদের প্রত্যাশা—ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুর–৩ থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হবেন।
সুলতান মাহমুদ/এজে/দীপ্ত সংবাদ