বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢাকায় যাবেন। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করেছেন। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী ট্রেনে ও বাসে আগাম বুকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ট্রেনে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর এক্সট্রা বগি লাগানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ব্যবস্থা করা হচ্ছে একটি স্পেশাল ট্রেনের। ট্রেনের বগি বুকিং এবং স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
পরিবহন মালিকদের সঙ্গেও বাস ভাড়া নিতে যোগাযোগ শুরু করেছেন দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা। বাস–ট্রাক পিকআপ, মাইক্রোবাস থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত গাড়ি এমনকি বিমানেও নেতাকর্মীরা যাত্রা করবেন। ২৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে ১৬টি আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত এবং মনোনয়নপ্রত্যাশী সব নেতারা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চট্টগ্রাম–৮ (চান্দগাঁও–বোয়ালখালী) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম–৯ (কোতোয়ালি–বাকলিয়া) আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম–১২ আসনের প্রার্থী এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম–১৩ আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত সরওয়ার জামাল নিজাম, ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন থেকে শুরু করে সবকটি আসনের মনোনয়নপ্রাপ্ত বিএনপি নেতারা নিজ নিজ অনুসারী নেতাকর্মীদের ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
নেতাকর্মীরা বলছেন, তারেক রহমান দেশে ফেরার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই দলের নেতাকর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে দেশবাসীর মধ্যে এক ধরনের উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। তাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর বিষয়ে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্মরণকালের সেরা সংবর্ধনা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে দল। মহানগর বা জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরাও এই বিশেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নিজেও ঢাকায় চলে যাবেন জানিয়ে বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রাম থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন ট্রেনের বগিও বুকিং করা হয়েছে। এছাড়া বাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারে ঢাকা যাওয়া শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। অনেক নেতাকর্মী ইতোমধ্যে চলে গেছেন। যারা বাকি আছেন তারা আজ রাত অথবা কাল যাবেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এই ক্ষণটি উদ্যাপন করতে চান চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা। সবার মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ–উদ্দীপনা। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার ইচ্ছা পুষে রেখেছেন অনেকেই। বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে লাখেরও বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢাকায় যাবেন বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে রেলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর ঢাকামুখী বিভিন্ন ট্রেনের বগিতে চাহিদা ও সক্ষমতা অনুযায়ী এক্সট্রা বগি লাগানোর আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে একটি স্পেশাল ট্রেনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু নগরী থেকেই ৩৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মী তাদের প্রিয় নেতাকে বরণ করতে ঢাকায় যাবেন বলে তিনি জানান। দলবদ্ধভাবে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি বা ব্যবস্থাপনায়ও নেতাকর্মীরা ঢাকার পথ ধরেছেন সোমবার থেকে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রতিটি ইউনিট ও ওয়ার্ড কমিটি থেকে শুরু করে জেলা কমিটি পর্যন্ত সর্বস্তরের কমিটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় যেতে প্রস্তুত। তবে এই ইউনিটের নেতাকর্মীরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করবে না। কারণ দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে আসতেও আলাদা গাড়ির প্রয়োজন হয়। তাই দলীয় এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্যোগে ইতোমধ্যে বাস ভাড়া করা হয়েছে। এছাড়া মাইক্রোবাস কিংবা ট্রাক–পিকআপে করেও তারা ঢাকা যাবেন। কারণ যে পরিমাণ চাহিদা সে পরিমাণ বাস নেই রুটে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেখতে মোটরসাইকেল চালিয়েও অনেকে ঢাকার পথে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে ৩০ হাজারের বেশি ঢাকায় যাবেন বলে তিনি জানান।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে বরণ করতে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক বাস বুকিং করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে উত্তর চট্টগ্রামের বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন বলে জানান উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী।
নগরীর দাম পাড়াস্থ সৌদিয়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নুরে আলম জানান, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বরের বাসের টিকিট এক সপ্তাহ আগে থেকেই বুকিং হয়ে গেছে। এই দুদিনের জন্য অতিরিক্ত বাস নামানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অন্যান্য কোম্পানিতেও একই অবস্থা বলে তিনি জানান।