তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ছয় মাস করার সুপারিশ করে সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুজন। পাশাপাশি সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রস্তাবও করেছে তারা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) সংবিধান সংস্কারের লক্ষ্যে ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের কাছে সুজন তাদের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়।
এ সময় সুজনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারসহ সংবিধান সংস্কার কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সুজন-এর লিখিত প্রস্তাবে যেসব বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে-
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সংসদ ব্যবস্থার পরিবর্তন:
১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়, যার মূল কাজ ছিল নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই ব্যবস্থা বাতিল করে, যা পরবর্তী নির্বাচনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। সুজন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের সুপারিশ করলেও বিচার বিভাগকে এর সাথে যুক্ত না করার পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে, সংসদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করার প্রস্তাব করেছে, যার মধ্যে ১০০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে বলেছে। এছাড়া, দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রবর্তন এবং স্থানীয় সরকারে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবও করা হয়েছে।
পদমেয়াদ ও ক্ষমতার ভারসাম্য:
সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী পদে একই ব্যক্তির দু’বারের বেশি অধিষ্ঠান নিষিদ্ধ এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার প্রস্তাব করেছে সুজন। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছে, তবে আস্থা ভোট এবং বাজেট পাসের ক্ষেত্রে ফ্লোর ক্রসিং নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।
নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার:
সুজন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছে এবং এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। মিশ্র পদ্ধতির প্রস্তাবে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০টি আসন এবং ভোটের শতাংশ অনুযায়ী বাকি ২০০টি আসন বণ্টনের কথা বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার ও মনোনয়ন প্রক্রিয়া:
সুজন স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে আয়োজন এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সম্পাদনের প্রস্তাব করেছে। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে গোপন ব্যালট পদ্ধতি চালু করার জন্য একটি বিশেষ সম্মেলন আয়োজনের সুপারিশও করেছে।
পুরুষতান্ত্রিক ভাষা পরিবর্তন ও সংখ্যালঘু স্বীকৃতি:
সংবিধানে পুরুষতান্ত্রিক শব্দাবলি পরিহার করার প্রস্তাব দিয়েছে সুজন। নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সংরক্ষিত আসনে অনগ্রসর নারীদের অন্তর্ভুক্তি এবং সংবিধানে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি প্রদান করার প্রস্তাব করেছে।
সংবিধান সংস্কারের রূপরেখা:
সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সুজন বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলগুলো সংবিধান সংস্কারে একমত হয়।
সুজনের মতে, জনস্বার্থে সংবিধান সংশোধন করা যেতে পারে, তবে সংশোধিত কোনো বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হলে তা যথাযথভাবে মেনে চলা আবশ্যক।
সুপ্তি / দীপ্ত সংবাদ